নামাজ ইসলাম ধর্মের প্রধান ইবাদত ইসলাম মুসলমানদের উপর দিন ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয। আর এগুলো হল, ফজরের নামায, যোহরের নামায, আসরের নামায, মাগরিবের নামায এবং এশার নামায।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সময়ঃ
১। ফজর: এর সময় ফজরেসানী অর্থাৎ রাতের শেষাংশে, পূর্বাকাশে, শ্বেত আভা প্রসারিত হওয়া থেকে নিয়ে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত।
২। যোহর: এর সময় মধ্যকাশ থেকে সূর্য ঢলে যাওয়ার পর মূল ছায়া ব্যতীত প্রত্যেক জিনিসের ছায়া তার সমান হওয়া পর্যন্ত।
৩। আসর: এর সময় যোহরের সময় শেষ হবার পর আরম্ভ হয় যাওয়ালের ছায়া ছাড়া প্রত্যেকটি জিনিসের ছায়া দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত। (এটি সবচে উত্তম ওয়াক্ত) আর জরুরী ওয়াক্ত সূর্য নিস্তেজ হয়ে রোদের হলুদ রং হওয়া পর্যন্ত।
৪। মাগরির: এর সময় সূর্যাস্তের পর থেকে শফক্বে আহমার অর্থাৎ পশ্চিম আকাশে লোহিত রং অদৃশ্য হওয়ার আগ পর্যন্ত।
৫। এ'শা: এর সময় মাগরিবের সময় শেষ হওয়ার পর থেকে রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত। অথবা রাতের প্রথম অর্ধাংশ পর্যন্ত।
নামাজের সঠিক নিয়ত এবং তাসবীহঃ
তবে যারা নামাজের সঠিক নিয়ত এবং তাসবীহ জানেন না কিংবা নতুন নামাজ পড়া ধরেছেন তাদের জন্য নিচে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সঠিক নিয়ত ও তাসবীহ দেয়া হলো-
১। ফজরের নামাজ
ফজরের ২ রাকাত সুন্নত নামাজের নিয়ত
বাংলায় : (নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা রাকয়াতাই সালাতিল ফাজরি, সুন্নাতু রাসুলিল্লা-হি তাআলা মুতাও য়াজজিহান্ ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আক্বার।)
ফজরের ২ রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ত
বাংলায় : (নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা রাকয়াতাই সালাতিল ফাজরি, ফারজুল্লা-হি তায়ালা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।)
বিশেয় দ্রষ্টব্যঃ ইমামতি করিতে-আনা ইমামুল্লিমান হাজারা ও মাইয়্যাফজুরু সহ মুতাওয়াজ্জিহান বলতে হবে আর ইমামের পিছনে নামাজ পড়িতে হলে বলতে হবে(এক্তাদাইতু বিহা-যাল ইমামি মুতা ওয়াজ্জিহান…)।
২। জোহরের নামাজ
জোহরের নাময মোট ১২ রাকাত। সূর্য মাথার উপর হইতে পশ্চিম্ দিকে একটু হেলিয়া পড়িলেই জোহরের নামাযের ওয়াক্ত আরম্ভ হয় এবং কোন কিছুর ছায়া দ্বিগুণ হইলে জোহরের ওয়াক্ত শেষ হইয়া যায়।
জোহরের ৪ রাকায়াত সুন্নত নামাজের নিয়ত
বাংলায় : (নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-তাআলা আরবাআ রাকয়াতি সালাতিজ জোহরি সুন্নাতু রাসুলিল্লা-হি তায়ালা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার। )
জোহরের ৪ রাকায়াত ফরজ নামাজের নিয়ত
বাংলায় : (নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা আরবাআ রাকয়াতি সালাতিজ জোহরি ফারজুল্লাহি তাআলঅ মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।)
জোহরের ২ রাকায়াত সুন্নত নামাজের নিয়ত
বাংলায় : (নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা রাকায়াতাই সালাতিজ জোহরি সুন্নাতি রাসূলিল্লা-হি তাআলা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
জোহরের ২ রাকায়াত নফল নামাজের নিয়ত
বাংলায় : (নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা রাকয়াতাই সালাতিল নাফলি মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার)।
৩। আছরের নামাজ
আছরের নামায মোট ৮ রাকাত। কোন লাকড়ির ছায়া দ্বিগুণ হওয়ার পর হইতে সূর্যাস্তের ১৫/২০ মিনিট পূর্বে পর্যন্ত আছরের নামাযের সময় থাকে।
আছরের চার রাকায়াত সুন্নাত নামাযের নিয়ত
বাংলায় : (নাওয়াইত ুআন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা আরবাআ রাকায়াতি সালাতিল আছরি সুন্নাতু রাসূলিল্লা-হি তাআলা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।)
আছরের চার রাকায়াত ফরজ নামাযের নিয়ত
বাংলায় : (নাওয়াইত ুআন্উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা আরবাআ রাকায়াতি সালাতিল আছরি ফারজুল্লা-হি তাআলা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার)।
৪। মাগরিবের নামাজ
মাগরিবের নামায মোট ০৭ রাকায়াত। সূর্যাস্তের পর হইতে মাগরিবের নামাযের সময় হয় মাগরিবের ওয়াক্ত অতি অল্পকাল স্থায়ী।
মাগরিবের ৩ রাকায়াত ফরজ নামাযের নিয়ত
বাংলায় : (নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা ছালাছা রাকয়াতি সালাতিল মাগরিব ফারজুল্লা-হি তাআলা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।)
মাগরিবের ২ রাকায়াত সুন্নাত ফরজ নামাযের নিয়ত
বাংলায় : (নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা রাকয়াতাই সালাতিল মাগরিবি সুন্নাতু রাসূলিল্লা-হি তায়ালা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।)
উক্ত দুই রাকায়াত সুন্নত নামায শেষ হইলে দুই রাকয়াত নফল নামাজ পরিবেন।
৫। এশার নামাজ
এশার ৪ রাকায়াত সুন্নত নামাজের নিয়ত
বাংলায় : (নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা আরবাআ রাকয়াতি এশায়ি সুন্নাতু রাসূলিল্লা-হি তায়ালা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।)
এশার চার রাকায়াত ফরজ নামাজের নিয়ত
বাংলায় : (নাওয়াইত ুআন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা আরবাআ রাকয়াতি এশায়ি ফারজুল্লা-হি তায়ালা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
এশার দুই রাকায়াত সুন্নাত নামাজের নিয়ত
বাংলায় : (নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা রাকায়াতি সালাতিল এশায়ি সুন্নাতু রাসুূলিল্লা-হি তাআলা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।)
তিন রাকায়াত বেতের নামাজের নিয়ত
বাংলায় : (নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা ছালাছা রাকায়াতি সালাতিল বিতরি ওয়াজিবুল্লা-হি তাআলা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।)
নামায যেভাবে আদায় করবেনঃ
উল্লিখিত বিবরণ অনুযায়ী নামাযের স্থান ও শরীরের পবিত্রতা অর্জনের পর নামাযের সময় হলে নফল অথবা ফরয, যে কোন নামায পড়ার ইচ্ছা করুন না কেন, অন্তরে দৃঢ়সংকল্প নিয়ে কিব্লা অর্থাৎ পবিত্র মক্কায় অবস্থিত কাবা শরীফের দিকে মুখ করে একাগ্রতার সাথে দাঁড়িয়ে যাবেন এবং বর্ণিত কর্মগুলো করবেন:
১। সেজদার জায়গায় দৃষ্টি রেখে তাক্বীরে তাহ্রীমা (আল্লাহু আকবার) বলবেন।
২। তাকবীরের সময় কান বরাবর অথবা কাঁধ বরাবর উভয় হাত উঠাবেন।
৩। তাকবীরের পর দু’আ পড়বেন, পড়া সুন্নাত। দু’আটি নিুরূপ:
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلا إلَهَ غَيْرُكَ
উচ্চারণ: সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তা’আলা জাদ্দুকা ওয়া লা-ইলাহা গাইরুকা।
অর্থ: “প্রশংসা এবং পবিত্রতা বর্ণনা করছি আপনার হে আল্লাহ! বরকতময় আপনার নাম। অসীম ক্ষমতাধর ও সুমহান আপনি। আপনি ভিন্ন আর কোন উপাস্য নেই”।
ইচ্ছা করলে উক্ত দু’আর পরিবর্তে এই দোআ পড়া যাবে:
”اَللَّهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِي وَبَيْنَ خَطَايَايَ كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ، اَللَّهُمَّ نَقِّنِي مِنْ خَطَايَايَ كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الأَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ، اَللَّهُمَّ اغْسِلْنِي مِنْ خَطَايَايَ بِالْمَاْءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ“
উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা বাইদ্ বাইনী ওয়া বাইনা খাতাইয়াইয়া কামা বা’আত্তা বাইনাল মাশরিকি ওয়াল মাগরিবি, আল্লাহুম্মা নাক্কিনী মিন খাতাইয়াইয়া কামা য়ুনাক্কাছ ছাওবুল আবইয়াযু মিনাদ্দানাসি, আল্লাহুম্মাগ্সিল্নী মিন্ খাতাইয়াইয়া বিল মায়ি ওয়াছ্ ছালজি ওয়াল বারাদি”।
অর্থ: “হে আল্লাহ! আমাকে ও আমার গুনাহের মাঝে এতটা দূরত্ব সৃষ্টি করুন যতটা দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝে। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ঠিক ঐভাবে পাপমুক্ত করুন যেভাবে সাদা কাপড় ময়লামুক্ত হয়। হে আল্লাহ! আপনি আমার গুনাহসমূহকে পানি দিয়ে ও বরফ দিয়ে এবং শিশির দ্বারা ধুয়ে দিন”। (বুখারী ও মুসলিম)
৪। তারপর মনে মনে বলবেন:
أَعُوْذُ باللهِِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
উচ্চারণ: “আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম, বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম”।
অর্থ: “আমি আশ্রয় চাচ্ছি আল্লাহর নিকট অভিশপ্ত শয়তান থেকে। আরম্ভ করছি দয়াবান কৃপাশীল আল্লাহর নামে।”
এর পর সূরা ফাতিহা পড়বেন:
الْحَمْدُ للّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ * الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ * مَلِكِ يَوْمِ الدِّينِ * إِيَّاكَ نَعْبُدُ وإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ * اهدِنَا الصِّرَاطَ المُستَقِيمَ * صِرَاطَ الَّذِينَ أَنعَمتَ عَلَيهِمْ غَيرِ المَغضُوبِ عَلَيهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ آمين
অর্থ: “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি সৃষ্টিকুলের রব। পরম করুণাময়, অতি দয়ালু। বিচার দিবসের মালিক। আপনারই আমরা ইবাদত করি এবং আপনারই নিকট সাহায্য চাই। আমাদেরকে সরল পথের হিদায়াত দিন। তাদের পথ, যাদেরকে আপনি নিয়ামত দিয়েছেন। যাদের উপর আপনার ক্রোধ আপতিত হয় নি এবং যারা পথভ্রষ্টও নয়।”
৫। তারপর কুরআন হতে মুখস্থ যা সহজ তা পড়বেন। যেমন:
إِذَا جَاء نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ * وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللَّهِ أَفْوَاجًا * فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ إِنَّهُ كَانَ تَوَّابًا
অর্থ: “যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এবং আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবেন, তখন আপনি আপনার পালককর্তার পবিত্রতা ঘোষণা করুন এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল।”
৬। তারপর আল্লাহু আকবার (আল্লাহ সবচেয়ে বড়) বলে দুই হাত হাঁটুর উপর রেখে পিঠ সোজা ও সমান করে রুকু করবেন এবং বলবেন
سُبْحَانَ رَبِّيِ الْعَظِيمِ উচ্চারণ: “সুবহানা রাব্বিয়্যাল আযীম
(পবিত্র মহান রবের পবিত্রতা ঘোষণা করছি) এটি তিনবার অথবা তিনের অধিকবার বলা সুন্নত। তারপর বলবেন: ”سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَه“ “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ” (আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে শুনলেন যে তাঁর প্রশংসা করল) বলে রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে, ইমাম হোক অথবা একাকী হোক, সোজা দাঁড়িয়ে গিয়ে বলতে হবে ”رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ''
উচ্চারণ: রব্বানা ওয়া লাকাল হামদু অর্থ: “ হে আমার প্রতিপালক! প্রশংসা আপনারই জন্য,
৮। তারপর اللهُ أَكْبَرُ (আল্লাহু আকবর) বলে বাহুকে তার পার্শ্বদেশ থেকে এবং ঊরুকে উভয় পায়ের রান থেকে আলাদা রেখে সেজদা করবেন। সেজদা পরিপূর্ণ হয় সাতটি অঙ্গের উপর, কপাল-নাক, দুই হাতের তালু, দুই হাঁটু এবং দুই পায়ের অঙ্গুলির তলদেশ। সেজদার অবস্থায় তিনবার অথবা তিন বারেরও বেশি এই দুআ পড়বেন।
سُبْحَانَ رَبِّيَ الاَعْلَى উচ্চারণঃ সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা (পবিত্রতা ঘোষণা করছি আমার মহান প্রতিপালকের) বলবেন এবং ইচ্ছা মত বেশী করে দু’আ করবেন।
৯। তারপর اللهُ أَكْبَرُ (আল্লাহু আকবার) বলে মাথা উঠিয়ে পা খাড়া রেখে বাম পায়ের উপর বসে দুই হাত, রান ও হাঁটুর উপর রেখে বলবেন,
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي، وَارْحَمْنِي، وَعَافِنِي وَارَزُقْنِي وَاهْدِنِي، وَاجْبُرْنِيْ
উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মাগর্ফিলী ওর্য়াহামনী ওয়া আফিনী ওয়ারজুকনী ওয়াহ্দিনী ওয়াজবুরনী”।
অর্থ: “ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, দয়া করুন, নিরাপদে রাখুন, জীবিকা দান করুন, সরল পথ দেখান, শুদ্ধ করুন”।
১০। তারপর اللهُ أَكْبَر (আল্লাহু আকবার) বলে দ্বিতীয় সেজদা করবেন এবং প্রথম সেজদায় যা করেছেন তাই করবেন।
১১। তারপর اللهُ أَكْبَر (আল্লাহু আকবার) বলে দ্বিতীয় রাকাতের জন্য উঠে দাঁড়াবেন। (এই ভাবে প্রথম রাকাত পূর্ণ হবে।)
১২। তারপর দ্বিতীয় রাকাআতে সূরা ফাতিহা ও কুরআনের কিছু অংশ পড়ে রুকু করবেন এবং দুই সেজদা করবেন, অর্থাৎ পুরোপুরিভাবে প্রথম রাকাতের মতোই করবেন।
১৩। তারপর দ্বিতীয় রাকাতের দুই সেজ্দা থেকে মাথা উঠানোর পর দুই সাজ্দার মাঝের ন্যায় বসে তাশাহ্হুদের এই দু’আ পড়বেন:
”اَلتَّحِيَاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ، اَلسَّلامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، اَلسَّلامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِاللهِ الصَالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ الهُص وأَشهدُ أَنَّ مُحَمَّداً عبْدُهُ وَرَسُولُهُ“
উচ্চারণ:আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস্সলাওয়াতু ওয়াত্তাইয়েবাতু, আস্সালামু আলাইকা আইয়ুহান্নাবিয়্যু ওয়া রহ্মাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ, আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস্ সলেহীন, আশ্হাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহ”।
অর্থ : “সকল তাযীম ও সম্মান আল্লাহর জন্য, সকল সালাত আল্লাহর জন্য এবং সকল ভাল কথা ও কর্মও আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপানার প্রতি শান্তি, আল্লাহর রহমত ও তাঁর বরকত বর্ষিত হোক। আমাদের উপরে এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের উপরে শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল।”
তবে নামায যদি দুই রাকাত বিশিষ্ট হয়। যেমন: ফজর, জুমআ, ঈদ তাহলে আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ….. পড়ার পর একই বৈঠকে এই দরূদ পড়বেন:
”اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، وَ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ“
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়ালা আলি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়ালা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ, ওয়া বারিক আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়ালা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাক্তা আলা ইব্রাহীমা ওয়ালা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ”।
অর্থ: “ হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদ ও তার বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করুন, যেরূপভাবে আপনি ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম ও তার বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করেছিলেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত সম্মানিত।”
আপনি মুহাম্মাদ ও তার বংশধরদের উপর বরকত বর্ষণ করুন, যেরূপভাবে আপনি ইব্রাহীম ও তার বংশধরদের উপর বরকত বর্ষণ করেছিলেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত, সম্মানিত”।
তারপর দুয়া মাসুরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত সালাম ফেরানোর পূর্বের দুয়াগুলোকে ‘দুয়া মাসুরা’বলা হয়। সাধারণত আমরা যেই দুয়া মাসুরাটা পড়ি, এছাড়াও আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ দুয়া মাসুরা আছে, যা আপনারা বিভিন্ন বই থেকে মুখস্থ করতে পারেন। সাধারণত বেশিরভাগ মানুষ যেই দুয়া মাসুরাটা পড়ে।
اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْماً كَثِيراً، وَلاَ يَغْفِرُ الذُّنوبَ إِلاَّ أَنْتَ، فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ وَارْحَمْنِي، إِنَّكَ أَنْتَ الغَفورُ الرَّحيمُ
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী যলামতু নাফসী যুলমান কাসীরা। ওয়ালা ইয়াগফিরুয্-যুনূবা ইল্লা আংতা। ফাগফির লী মাগফিরাতাম মিং ই’নদিকা, ওয়ারহা’মনী, ইন্নাকা আনতাল গাফূরুর রাহীম।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আমার নিজের উপর অনেক যুলুম করেছি। আর আপনি ছাড়া গুনাহসমূহ কেউ ক্ষমা করতে পারে না। সুতরাং আমাকে আপনার পক্ষ থেকে বিশেষ ক্ষমা দ্বারা মাফ করে দিন, আর আমার প্রতি দয়া করুন; নিশ্চয়ই আপনি তো ক্ষমাকারী, পরম দয়ালু
আল্লা-হুম্মা – হে আল্লাহ! ইন্নী – নিশ্চয়ই আমি, যলামতু – যুলুম/অন্যায় করেছি, নাফসী – নিজের উপরে, যুলমান কাসীরা – অনেক অন্যায়। ফাগফির লী – অতএব আমাকে মাফ করুন, মাগফিরাতাম মিং ই’নদিকা – আপনার পক্ষ থেকে বিশেষ ক্ষমার দ্বারা, ওয়ারহা’মনী – আর আমার প্রতি দয়া করুন, ইন্নাকা আনতাল – নিশ্চয়ই আপনি তো, গাফূর থেকে গাফূরুর –
অত্যন্ত ক্ষমাশীল, রাহীম – পরম দয়ালু।
তারপর ডান দিকে (গর্দান ঘুরিয়ে)
”اَلسَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ“
উচ্চারণ: “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ”
ও বাম দিকে (গর্দান ঘুরিয়ে)
”اَلسَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ“
বলবেন।
আর নামায যদি তিন রাকাত বিশিষ্ট হয়, যেমন মাগরিব। অথবা চার রাকাত বিশিষ্ট হয়, যেমন যোহর, আসর ও এশা, তাহলে দ্বিতীয় রাকাতের পর (সালাম না ফিরিয়ে) “আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি…. পড়ার পর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে দু হাত কাঁধ বরাবর অথবা কান বরাবর উত্তোলন করে সোজা দাঁড়িয়ে গিয়ে শুধু সূরা ফাতিহা পড়ে প্রথম দু’ রাকাতের মত রুকু ও সাজদা করতে হবে এবং চতুর্থ রাকাতেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। তবে (শেষ তাশাহ্হুদে) বাম পা, ডান পায়ের নীচে রেখে ডান পা খাড়া রেখে মাটিতে নিতম্বের (পাছার) উপর বসে মাগরিবের তৃতীয় রাকাতের শেষে এবং যোহর, আসর ও এশার চতুর্থ রাকাতের শেষে, শেষ তাশাহ্হুদ (আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহ……, ও দরূদ পড়বেন। ইচ্ছে হলে অন্য দু’আও পড়বেন। এরপর ডান দিকে (গর্দান) ঘুরিয়ে (আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ” বলবেন। আর এভাবেই নামায সম্পন্ন হয়ে যাবে।
নামাজসম্পর্কে আপনার মূল্যবান লেখাটির জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। মহান আল্লাহ তায়ালা নিশ্চয়ই এর উত্তম প্রতিদান আপনাকে দেবেন। আমিন।
ReplyDeleteআরও নতুন নতুন গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আমি আশা করছি। ধন্যবাদ