বিদা’ত শব্দের আভিধানিক অর্থ হল,কোন বস্তুকে আবিস্কার করা বা তৈরি করা।শরীয়তের পরিভাষায় বিদা’ত শব্দের অর্থ হল দ্বীনের মধ্যে সওয়াব অর্জনের উদ্দেশে এমন কোন বস্তুকে সৃষ্টি করা,যার কোন ভিত্তি সুন্নাহে পাওয়া যায় না।
জাবের (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাহুয়ালিহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ
হামদ ও সানা তথা আল্লাহর প্রশংসার পরে মনে রাখবে,সর্বোত্তম কথা হল আল্লাহর কিতাব,আর সর্বোত্তম নিয়ম পদ্ধতি হল মুহাম্মাদ (সাল্লাহুয়ালিহি ওয়াসাল্লাম) এর নিয়ম পদ্ধতি।আর সবচেয়ে খারাপ কাজ হল,দ্বীনে নতুন কথা আবিস্কার করা।আর প্রত্যেক বিদা’ত গুমরাহী।
(মুসলিম,কিতাবুল জুমুআহ,হাদিস-৮৬৭)
বিদা’তিকে সহযোগিতাকারীর উপর আল্লাহর অভিশাপঃ
আলী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ(সাল্লাহুয়ালিহি ওয়াসাল্লাম)বলেছেনঃ আল্লাহ অভিশাপ করেছেন সেই ব্যাক্তি যে আল্লাহ ব্যতিত অন্য কারো নামে জবাই করে,আর যে জমির সীমা চুরি করে,আর যে মাতা পিতাকে অভিশাপ দেয়,আর যে বিদা’তিকে আশ্রয় দেয়।
(মুসলিম,কিতাবুল আযাহী,হাদিস-১৯৭৮)
বিদা’তি আমল আল্লাহর কাছে অগ্রহণযোগ্যঃ
আয়েশা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত,রাসুলুল্লাহ(সাল্লাহুয়ালিহি ওয়াসাল্লাম)বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি এমন কাজ করল যা দ্বীনে নেই,সেই কাজটি আল্লাহর কাছে পরিত্যাজ্য।
(বুখারি ও মুসলিম,আলল’লুউ ওয়াল মারজান,২য় খণ্ড,হাদিস-১১২০)
রাসুলুল্লাহ(সাল্লাহুয়ালিহি ওয়াসাল্লাম) এর অসন্তুস্টির কারণঃ
সাহাল ইবনু সাআদ(রাযিঃ) হতে বর্ণিত,রাসুলুল্লাহ(সাল্লাহুয়ালিহি ওয়াসাল্লাম)বলেছেনঃ আমি হাউজে কাওসারে তোমাদের অপেক্ষাই থাকব।যে ব্যাক্তি সেখানে আসবে সে পানি পান করবে।আর যে ব্যাক্তি একবার পান করবে সে আর তৃষ্ণার্ত হবে না।কিছু লোক এমন আসবে জাদের আমি চিনি এবং তারাও আমাকে চিনবে।আমি মনে করব,তারা আমার উম্মাত।তারপর তাদেরকে আমার কাছ পর্যন্ত পৌছতে দেওয়া হবে না।আমি বলবোঃএরা তো আমার উম্মত।আমাকে বলা হবেঃহে মুহাম্মাদ,আপনি জানেন না, আপনি দুনিয়া থেকে ছলে আসার পর এসব লোকেরা কেমন বিদা’ত সৃষ্টি করেছে।তারপর আমি বলবোঃতাহলে দূর হোক,দূর হোক সে সকল লোকেরা যারা আমার পর দ্বীন পরিবর্তন করেছে।
(বুখারি ও মুসলিম,আলল’লুউ ওয়াল মারজান,২য় খণ্ড,হাদিস-১৪৭৬)
আউজুবিল্লাহ একাকী নামায আদায়কারী, ইমাম ও মুক্তাদীর জন্য আস্তে পড়ার বিধান রাসূল সাঃ এর কোন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত? যদি প্রমাণিত না হয়, তাহলে তারা এর উপর আমল করেন কুরআনের কোন আয়াত বা কোন সহীহ হাদীসের ভিত্তিতে?
যদি নামাযে সানা ইচ্ছেকৃত না পড়ে, তাহলে নামায হবে কি না? সহীহ হাদীস দিয়ে জানান।যদি ভুলে সানার স্থলে আত্তাহিয়্যাতু পড়ে ফেলে, তাহলে সাহু সেজদা আবশ্যক হবে কি না? সহীহ সরীহ হাদীস দিয়ে প্রমাণ দিন।একাকী নামায আদায়কারী ব্যক্তি প্রতিটি নামাযেই সূরা ফাতিহা ও অন্য সূরা আস্তে আস্তে পড়ে থাকে, এর দলিল কোন সহীহ সরীহ হাদীস? ইমাম বুখারী মুআম্মাল বিন ইসমাঈলকে মুনকারুল হাদীস বলেননি? বুকের উপর হাত বাঁধার দলীল বিষয়ে কথিত আহলে হাদীসদের ধোঁকাবাজী উন্মোচনপ্রশ্নআসসালামু আলাইকুম।আপনাদের কাছে করা অনেক প্রশ্নেরই উত্তর আমি পাই নি, হয়ত আপনাদের সময় স্বল্পতা আর প্রশ্নের আধিক্যতার কারণে। যাই হোক, নিচের এই ভিডিওতে একজন দাবি করেছেন, সহীহ ইবনে খুযাইমাতে উল্লেখিত সুফিয়ান ছাওরী রাহ., আসেম ইবনে কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণনা করেছেন, ‘আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে নামায পড়লাম … তিনি তাঁর ডান হাত বাম হাতের উপর বুকের উপর রাখলেন।-সহীহ ইবনে খুযায়মা ১/২৭২, হাদীস : ৪৭৯এই হাদীসটির রাবী মুয়াম্মাল ইবনে ইসমাইলকে ইমাম বুখারী মুনকারুল হাদীস বলেননি, তিনি মুনকারুল হাদীস বলেছেন মুয়াম্মাল ইবনে সাঈদকে। কিন্তু আমি অনেক ইন্টারনেটে অনেক লিখাতে পড়েছি মুয়াম্মাল ইবনে ইসমাইলকেই তিনি মুনকারুল হাদীস বলেছেন। দয়া করে কি ব্যাখ্যা করবেন কোনটা সঠিক ?প্রশ্নকর্তা- সাইফ তারেক। উত্তরوعليكم السلام ورحمة الله وبركاتهبسم الله الرحمن الرحيمআসলে কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা তাদের থিউরী “কুরআন ও সহীহ হাদীসই দলীলযোগ্য” একথার দাবিতে অটল থেকে বুকের উপর কোন দলীল পেশ করতে সক্ষম নন। তাই এক্ষেত্রে চালাকীর আশ্রয় নিয়ে থাকেন।কুরআন ও সহীহ হাদীসই যদি কেবল দলীলযোগ্য হয়, কুরআন ও সহীহ হাদীসের দলীল ছাড়া কোন উম্মতীর বক্তব্যের অনুসরণ যদি শিরক পর্যায়ের তাকলীদ হয়ে থাকে, তাহলে সহীহ ইবনে খুজাইমার উক্ত হাদীসটি তাদের দাবি অনুযায়ী আল্লাহ ও রাসূল সাঃ থেকে কি সহীহ সাব্যস্ত করিয়েছেন?যদি না করে থাকেন, তাহলে আল্লাহ ও রাসূল সাঃ যে হাদীসকে সহীহ বলেননি, সে হাদীসকে কুরআন ও সহীহ হাদীসের রেফারেন্স ছাড়া কোন উম্মতীর বক্তব্য দিয়ে সহীহ বলাটা কি উক্ত মুহাদ্দিসের অন্ধ তাকলীদ নয়?আমরা বিজ্ঞ মুজতাহিদের তাকলীদ করলে শিরক, আর তারা করলে সেটি কুরআন ও সহীহ হাদীসের উপর আমল হয় কি করে? মুখে মুখে কুরআন ও সহীহ হাদীসের দলীল মানার স্লোগান, আর কাজেকর্মে উম্মতীর বক্তব্য কুরআন ও সহীহ হাদীস ছাড়াই অন্ধভাবে মেনে নেয়ার নাম আর যাই কিছু হোক, কুরআন ও সহীহ হাদীসের অনুসরণ নয়, বরং ধোঁকাবাজী।
বুকের উপর হাত বাঁধার কোন দলীল যখন কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা কোথাও পেলেন না নিজেদের উদ্ভাবিত থিউরী “কুরআন ও সহীহ হাদীসই দলীলযোগ্য” অনুপাতে। তখন প্রথমেতো কুরআন ও হাদীসের দলীল ছাড়াই মুহাদ্দিসীনে কেরামের তাকলীদ করে সহীহ ইবনে খুজাইমার হাদীসটিকে সহীহ বলা শুরু করলেন।কিন্তু যখনি আমরা তাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলাম যে, যে ইমাম বুখারী রহঃ এর সকল মন্তব্যকেই চূড়ান্ত ও হক বলে বিশ্বাস করে থাকে, তিনি উক্ত বর্ণনাটির একজন রাবী মুয়াম্মাল বিন ইসমাঈলকে “মুনকারুল হাদীস বলে মন্তব্য করেছেন, তখন তাদের টনক নড়ল। নতুন বুদ্ধি বের করলেন। সেটি হল, মুয়াম্মাল ইবনে ইসমাঈলকে মুয়াম্মাল বিন সাঈদ বানিয়ে দেয়া।এ এক আজীব চালাকী।
চলুন, দেখি ইমাম বুখারী রহঃ মুয়াম্মাল বিন ইসমাঈল রহঃ কেই কি “মুনকারুল হাদীস” বলে মন্তব্য করেছেন নাকি না? সে ব্যাপারে মুহাদ্দিসীনে কেরাম তাদের স্বীয় কিতাবে কি লিখেছেন?
১আল্লামা মিজ্জী রহঃ লিখেছেন- وقَال البُخارِيُّ: منكر الحديث. তথা ইমাম বুখারী রহঃ বলেছেন, তিনি [মুআম্মাল বিন ইসমাঈল রহঃ] মুনকারুল হাদীস। {তাহযীবুল কামাল ফী আসমায়ির রিজাল, বর্ণনা নং-৬৩১৯}
২ইমাম যাহাবী রহঃ বলেন, ইমাম বুখারী রহঃ বলেছেন, মুয়াম্মাল বিন ইসমাঈল মুনকারুল হাদীস।আলমুগনী ফিজ জুআফা, বর্ণনা নং-৬৫৪৭,তারীখুল ইসলাম, বর্ণনা নং-৩৮০,সিয়ারু আলামিন নুবালা, বর্ণনা নং-১৫৪৬,জিকরু মান তাকাল্লামা ফীহি, বর্ণনা নং-৩৪৭,মিযানুল ইতিদাল, বর্ণনা নং-৮৯৪৯।
৩ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ বলেন, ইমাম বুখারী রহঃ মুআম্মাল বিন ইসমাঈলকে মুনকারুল হাদীস বলেছেন। {তাহযীবুত তাহযীব, বর্ণনা নং-৬৮, লিসানুল মিযান, বর্ণনা নং-৪৯৮৭}
৪আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহঃ বলেন, ইমাম বুখারী রহঃ মুআম্মাল বিন ইসমাঈলকে মুনকারুল হাদীস বলেছেন। {মাগানিয়ুল আখয়ার, বর্ণনা নং-২৪১৯}
৫আহমাদ বিন আব্দুল্লাহ ইয়ামানী রহঃ বলেন, ইমাম বুখারী রহঃ মুআম্মাল বিন ইসমাঈলকে মুনকারুল হাদীস বলেছেন। {খুলাসাতুল তাহযীবু তাহযীবিল কামাল}এতগুলো গ্রহণযোগ্য জারাহ তাদীলের ইমামগণ এতসব কিতাবে ইমাম বুখারী রহঃ এর মন্তব্যটি নকল করেছেন। ইমাম বুখারী রহঃ মুয়াম্মাল বিন ইসমাঈলকে নয়, মুয়াম্মাল বিন সাঈদ সম্পর্কে এ মন্তব্য করেছেন, এমন কথা কোন পূর্ববর্তী কোন গ্রহণযোগ্য জারাহ তাদীলের ইমাম কি বলেছেন?কেউ বলেননি, সবাই মুআম্মাল বিন ইসমাঈল সম্পর্কেই ইমাম বুখারীর মন্তব্যটির নিসবত করেছেন। মুআম্মাল বিন সাঈদের কথা কেউ বলেননি।একথা স্পষ্টভাবেই প্রমাণ করে যে, বর্তমানের নামধারী আহলে হাদীস ভাইয়েরা নিজেদের দলীলহীন মাসআলা প্রমাণের জন্য এতসব গ্রহণযোগ্য জারাহ তাদীলের ইমামগণের অবস্থানকে ভুল সাব্যস্ত করার হীন কর্মকান্ডে নেমেছেন।আল্লাহ তাআলা কথিত আহলে হাদীস নামধারী এসব ভ্রান্তদের চক্রান্ত থেকে সরলপ্রাণ মুসলমানদের হিফাযত করুন। আমীন।একটি মজার কথাএকই ব্যক্তি যখন কথিত আহলে হাদীস ভাইদের মাসআলার খেলাফ হন, তখন তিনি জঈফ ও অগ্রণযোগ্য সাব্যস্ত হয়ে যান, আবার উক্ত ব্যক্তিই যখন নিজেদের পক্ষের কোন মাসআলার দলীল হন, তখন তিনি কি করে গ্রহণযোগ্য হয়ে যান সেটি আমাদের বোধগম্য নয়।প্রথমে প্রশ্নে উল্লেখিত হাদীসটির সনদটির দিকে আমরা একটু দৃষ্টি বুলিয়ে নেইঃمؤمل عن سفيان عن عاصم بن كليب عن ابيه عن وائل بن حجرঅনুবাদ-মুআম্মাল সুফিয়ান ছাওরী রাহ থেকে, তিনি আসেম ইবনে কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণনা করেছেন।এবার কথিত আহলে হাদীস ভাইদের কয়েকটি ধোঁকাবাজী লক্ষ্য করি।
ধোঁকাবাজী নং-১ সহীহ ইবনে খুজাইমায় বর্ণিত হাদীসটির সূত্রে মুআম্মাল হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, সুফিয়ান সওরী রহঃ থেকে, আর সুফিয়ান সওরী রহঃ আসেম বিন কুলাইব থেকে বর্ণনা করেছেন।আর এ সূত্রটিকে কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা সহীহ সনদ বলে প্রচার করছেন।অথচ একই ধরণের সনদ তথা সুফিয়ান সওরী রহঃ আসেম বিন কুলাইব থেকে বর্ণনা সম্বলিত রফয়ে ইয়াদাইন রুকুতে গমণ ও উঠার সময় ছেড়ে দেয়ার বর্ণনা যখন আমরা আবু দাউদ, তিরমিজী ও নাসায়ী থেকে পেশ করি। তখন তারা বলে এ সনদ দুর্বল। কারণ সুফিয়ান সওরী রহঃ নাকি মুদাল্লিস। আর তিনি “আন” শব্দ দিয়ে বর্ণনা করেছেন, তাই হাদীসটি দুর্বল।অথচ সহীহ ইবনে খুজাইমার মাঝে সেই সুফিয়ান সওরী রহঃ যখন “আন” শব্দের মাধ্যমে আসেম বিন কুলাইব থেকে বর্ণনা করছেন তখন এ হাদীস তাদের গলার মালা হয়ে গেল। এখন কোথায় গেল “আন” বললে জঈফ হয়, বা সুফিয়ান সওরী রহঃ মুদাল্লিস সম্বলিত বক্তব্য?
ধোঁকাবাজী নং-২ রুকুতে গমণ ও উঠার সময় রফয়ে ইয়াদাইন ছেড়ে দেয়ার তিরমিজী, আবু দাউদ ও নাসায়ীর হাদীসটিকে তারা পরিত্যাজ্য আরেকটি কারণে বলে থাকে, সেটি হল, উক্ত হাদীসটির সনদে আসেম বিন কুলাইবন “মুনফারিদ” তথা একাকী বর্ণনাকারী। আর আসেম বিন কুলাইব যখন মুনফারিদ হন, তখন তিনি দলীলযোগ্য হন না।কিন্তু মজার বিষয় হল, সহীহ ইবনে খুজাইমায় বর্ণিত উক্ত সনদটিতেও আসেম বিন কুলাইব মুনফারিদ। এরকম বর্ণনা ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ আর কারো সূত্রে নেই। তাহলে তিরমিজী, নাসায়ী ও আবু দাউদের রফয়ে ইয়াদাইন ছেড়ে হাদীস আসেম বিন কুলাইব মুনফারিদ হওয়ার কারণে দলীলযোগ্য না থাকলে সহীহ ইবনে খুজাইমাতে মুনফারিদ হওয়া সত্বেও দলীলযোগ্য হয়ে গেলেন কিভাবে? বড়ই আশ্চয় ভাইদের মানসিকতা!
ধোঁকাবাজী নং-৩ সহীহ ইবনে খুজাইমায় বর্ণিত উক্ত হাদীসটির পরেই বর্ণিত হয়েছে কাছাকাছি সূত্রে-عَاصِمُ بْنُ كُلَيْبٍ الْجَرْمِيُّ، حَدَّثَنِي أَبِي أَنَّ وَائِلَ بْنَ حُجْرٍ أَخْبَرَهُ قَالَ: قُلْتُ: ” لَأَنْظُرَنَّ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَيْفَ يُصَلِّي قَالَ: فَنَظَرْتُ إِلَيْهِ، قَامَ فَكَبَّرَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى حَاذَتَا أُذُنَيْهِ،আসেম বিন কুলাইব তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ বর্ণনা করেন, ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ বলেন, আমি রাসূল সাঃ দেখছিলাম তিনি কিভাবে নামায আদায় করেন, তখন আমি দেখলাম, তিনি দাঁড়ালেন, তারপর তাকবীর দিলেন, তারপর উভয় হাত উঠালেন কানের লতি পর্যন্ত। {সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-৪৮০}আসেম বিন কুলাইব, তার পিতা, তিনি হযরত ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ এর সূত্রে প্রশ্নে বর্ণিত যে হাদীসটি উল্লেখ করা হল, সেটির নং হল, ৪৭৯, আর একই সূত্র তথা কুলাইব তার পিতা, পিতা হযরত ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল সাঃ নামাযে কান পর্যন্ত হাত উঠাতেন।অথচ কথিত আহলে হাদীসরা মহিলাদের মত কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠায়। কান পর্যন্ত হাত উঠায় না। এ হাদীসটির মুখালাফাত করে থাকে। এক সূত্রে বর্ণিত হাদীসকে গলার মালা বানানো, আরেক সূত্রে বর্ণিত হাদীসকে বাদ দিয়ে দেয়ার নাম কি সহীহ হাদীসের উপর আমল না মনের পূজা?ইমাম বুখারী রহঃ মুআম্মাল বিন ইসমাঈলকে মুনকারুল হাদীস না বললেও উক্ত হাদীস কথিত আহলে হাদীসদের দলীল হতে পারে না। কারণ ২টি। যথা-১ম কারণঃমুআম্মাল বিন ইসমাঈল মুনফারিদআসেম বিন কুলাইব, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি হযরত ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে। এ সূত্রের মাধ্যমে রাসূল সাঃ এর নামায সংক্রান্ত একাধিক সূত্র এসেছে।কয়েকটি সূত্র উল্লেখ করছি-
১عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الْوَلِيدِ، حَدَّثَنِي سُفْيَانُ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍআব্দুল্লাহ বিন ওয়ালীদ, তিনি সুফিয়ান থেকে, তিনি আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে…..।{মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৮৮৭১}
২حَدَّثَنَا شَرِيكٌ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ،শারীক বর্ণনা করেন আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে…..।{মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৮৮৬৮}
৩حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا سُفْيَانُ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍআব্দুর রাজ্জাক তিনি সুফিয়ান থেকে, তিনি আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে…..।{মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৮৮৫৮}
৪عَبْدُ اللَّهِ بْنُ إِدْرِيسَ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ،আব্দুল্লাহ বিন ইদরীস আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে…..।{সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৯১২}
৫حَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ الْمُفَضَّلِ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ،বিশর বিন মুফাদ্দাল আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে…..।{সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৭২৬}
৬عَنْ مُوسَى بْنِ أَبِي عَائِشَةَ عَنْ عَاصِم بْنِ كُلَيْبٍ، عَن أَبيهِ، عَن وَائِلِ بْنِ حُجْر، رَضِي اللَّهُ عَنْهُ،মুসা বিন আবী আয়শা থেকে, তিনি আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে…..।{মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৪৪৮৯}
৭قُتَيْبَةُ، قَالَ: حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ،কুতাইবা আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে…..।{সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-১২৬৩}
৮ابْنُ فُضَيْلٍ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍইবনে ফুযাইল আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে…..।{সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-৪৭৮}
৯شُعْبَةُ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍশুবা আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে…..।{সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-৪৭৮}
১০عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍআবু ইসহাক আসেম বিন কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ থেকে…..।{সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-১৭০৫}
এরকম আরো অসংখ্য সূত্রে উক্ত বর্ণনাটি এসেছে। কিন্তু কোথাও বুকের উপর হাত বাঁধার কথা উল্লেখ করা হয়নি। একমাত্র মুআম্মাল বিন ইসমাঈলের সূত্রে এসেছে বুকের উপর কথাটি।তাই তিনি বুকের উপর হাত বাঁধা বলার ক্ষেত্রে মুনফারিদ। আর সমস্ত জরাহ তাদীলের ইমামগণ একমত যে মুআম্মাল বিন ইসমাঈল প্রচুর ভুল করতেন। সুতরাং একথা সহজেই বুঝা যায় যে, উক্ত বর্ণনাটিতে বুকের উপর কথাটি তিনি হয়তো ভুলেই বলেছেন। নতুবা আর কারো সূত্রে একথা আসেনি কেন?মুয়াম্মাল বিন ইসমাঈল রহঃ ভুল করে উক্ত বর্ণনাটি আনতে পারেন। দলীল মুহাদ্দিসীনে কেরামের বক্তব্য দ্বারা স্পষ্ট
১- ইবনে সাদ রহঃ বলেন, তথা তিনি সিকা তবে প্রচুর ভুল করেন। {আততাবকাতুল কুবরা, বর্ণনা নং-১৬৫৬}
২- মুহাম্মদ বিন হিব্বান রহঃ বলেন, তিনি প্রায় ভুল করতেন। {আসসিকাতুল লিইবনে হিব্বান, বর্ণনা নং-১৫৯১৫}
৩- আল্লামা খতীব বাগদাদী রহঃ বলেন, তিনি প্রচুর করতেন। {তারীখে বাগদাদ-৬}
৪- ইমাম আবু হাতেম রহঃ বলেন, তিনি প্রচুর ভুল করতেন। {আলজারহু ওয়াততাদীল, বর্ণনা নং-১৭০৯}
৫- আল্লামা যাহাবী রহঃ বলেন, তিনি প্রচুর ভুল করতেন। {আলকাশশাফ, বর্ণনা নং-৫৭৪৭}
৬- ইমাম আবূ জুরআ রহঃ বলেন, তিনি প্রচুর ভুল করতেন। {আলমুগনী ফিজ জুআফা, বর্ণনা নং-৬৫৪৭}৭- ইমাম দারা কুতনী রহঃ বলেন, তিনি প্রচুর ভুল করেন। {তাহযীবুত তাহযীব, বর্ণনা নং-৬৮}
২য় কারণঃ হাদীসটির বর্ণনাকারীই উক্ত হাদীসের বিপরীত আমল করেন একথা সহজেই অনুমেয় যে, যিনি কোন কথা বর্ণনা করার পর উক্ত কথার বিপরীত কাজ করে থাকেন, তার কাছে তার বর্ণিত কথাটি আমলযোগ্য বা জরুরী নয় বলেই পরিস্কার বুঝা যায়।আর সহীহ ইবনে খুজাইমার উক্ত হাদীসের সূত্রের একজন রাবী হলেন, হযরত সুফিয়ান সওরী রহঃ। আর খোদ তিনিই বুকের উপর হাত বাঁধার মতকে গ্রহণ করেননি। বরং তিনি নাভির নিচে হাত বাঁধতেন।
ইমাম নববী রহঃ শরহে মুসলিমে উল্লেখ করেছেন- وقال ابو حنيفة وسفيان واسحاق بن راهوية وابو اسحاق المروازى من اصحابنا يجعلهما تحت سرتهতথা ইমাম আবু হানীফা রহঃ, সুফিয়ান সওরী রহঃ, ইসহাক বিন রাহুয়া রহঃ এবং আমাদের আসহাবদের মাঝে আবু ইসহাম মারওয়াজী রহঃ বলেন যে, উভয় হাতকে নাভির নিচে বাঁধতে হবে। {শরহে মুসলিম লিননববী-১/৭৩}আর বর্ণনাকারী খোদ নিজেই যখন স্বীয় বর্ণনার খেলাফ আমল করেন, তখন উক্ত বর্ণনা আমলহীন তা স্পষ্টতই বুঝে আসে।সুতরাং একথা পরিস্কার হয়ে গেল যে, আসলে বুকের উপর হাত বাঁধার কোন দলীলই নেই। যা কিছু কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা প্রচার করে বেড়ান, তা সবই তাদের নিজেদের তৈরীকৃত থিউরী অনুপাতেই ধোঁকাবাজী সাব্যস্ত হয়।আল্লাহ তাআলা আমাদের কথিত আহলে হাদীসদের ফিতনা থেকে সরলপ্রাণ মুসলমানদের হিফাযাত করুন। আমীন।
0 comments:
Post a Comment