আন্তঃ ধর্মীয় বিবাহ আইন ও কুরআনের বিধান
পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী বর্তমান সরকারের আমলে পারিবারিক আইন সংস্কারের নামে ইসলাম বিরোধী আন্তঃ ধর্মীয় বিবাহকে বৈধতা দানের উদ্দেশ্যে 'বিশেষ বিবাহ আইন ২০০৭' শীর্ষক একটি নতুন আইন ইতিমধ্যে সংসদে পাশ হয়ে আইনে রূপান্তরিত হয়েছে।
আল্লাহর বিধানেই নারী-পুরুষ একে অপরের জন্য বৈধ হয় এবংআল্লাহর বিধানেই হারাম হয়।
আন্তঃধর্মীয় বিবাহ আইনটি সম্পূর্ণ কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী একটি আইন।
কারণ আল্লাহ তাআলা শিরক ও কুফরি করে এমন নারী-পুরুষের সাথে মুসলমান নারী-পুরুষের বিবাহ হারাম করে দিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-
وَلَا تَنْكِحُوا الْمُشْرِكَاتِ حَتَّى يُؤْمِنَّ وَلَأَمَةٌ مُؤْمِنَةٌ خَيْرٌ مِنْ مُشْرِكَةٍ وَلَوْ أَعْجَبَتْكُمْ وَلَا تُنْكِحُوا الْمُشْرِكِينَ حَتَّى يُؤْمِنُوا وَلَعَبْدٌ مُؤْمِنٌ خَيْرٌ مِنْ مُشْرِكٍ وَلَوْ أَعْجَبَكُمْ أُولَئِكَ يَدْعُونَ إِلَى النَّارِ وَاللَّهُ يَدْعُو إِلَى الْجَنَّةِ وَالْمَغْفِرَةِ بِإِذْنِهِ وَيُبَيِّنُ آَيَاتِهِ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ
(তরজমা) তেমারা মুশরিক নারীদের বিয়ে করোনা যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। নিঃসন্দেহে একজন মুমিন দাসী যে কোনো মুশরিক নারীর চেয়ে অনেক উত্তম। যদিও এই মুশরিক নারীকে তোমাদের বেশি ভালো লাগে। আর তোমরা (তোমাদের নারীদের) মুশরিক পুরুষদের কাছে বিয়ে দিয়ো না। যতক্ষণ নাতারা ঈমান আনে। নিঃসন্দেহে একজন মুমিন দাস যেকোনো মুশরিক পুরুষের চেয়ে অনেক উত্তম। যদিও সেই মুশরিক পুরুষকে তোমাদের বেশি ভালো লাগে। কারণ তারা (মুশরিকরা) সকলে তো জাহান্নামের দিকে ডাকে আর আল্লাহ তার বিধানের মাধ্যমে জান্নাত ও মাগফিরাতের দিকে আহবান করেন। তিনি তার আয়াত সমূহ মানুষের উপকারার্থে স্পষ্টভাবে বর্ণনাকরেন, যাতে তারা তা অনুসরণ করতে পারে।-সূরাবাকারা (২) : ২২১
অন্য আয়াতে ইরশাদ করেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِذَا جَاءَكُمُ الْمُؤْمِنَاتُ مُهَاجِرَاتٍ فَامْتَحِنُوهُنَّ اللَّهُ أَعْلَمُ بِإِيمَانِهِنَّ فَإِنْ عَلِمْتُمُوهُنَّ مُؤْمِنَاتٍ فَلَا تَرْجِعُوهُنَّ إِلَى الْكُفَّارِ لَا هُنَّ حِلٌّ لَهُمْ وَلَا هُمْ يَحِلُّونَ لَهُنَّ.. وَلَا تُمْسِكُوا بِعِصَمِ الْكَوَافِرِ
(তরজমা) হে ঈমানদারগণ! যখন তোমাদের নিকট ঈমানদার নারীগণ হিজরত করে আসে তখন তোমরা তাদের পরীক্ষা কর। আল্লাহ অধিক জ্ঞাত তাদের ঈমানের ব্যাপারে। এরপর তোমরা যদি জানতে পার,তারা (হিজরত করে আসা নারীগণ) মুমিন তাহলে তাদেরকে কাফেরদের কাছে ফিরিয়ে দিও না। তারা (মুমিন নারীগণ) কাফেরদের জন্য বৈধ নয় এবংকাফেরগণও তাদের (মুমিন নারীদের) জন্য বৈধ নয় ...। আর তোমরা কাফের নারীদের সাথে দাম্পত্য সম্পর্ক বজায় রেখো না।-সূরা মুমতাহিনা (৬০) : ১০
উক্ত আয়াতদ্বয় দ্ব্যর্থহীনভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে,কোনো মুসলিম নারী কোনো অমুসলিম পুরুষের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে না। অনুরূপভাবে কোনো মুসলিম ব্যক্তি কোনো কাফের, মুশরিক নারীকে স্ত্রীরূপে গ্রহণ করতে পারে না। অর্থাৎ মুসলিম-অমুসলিমের কোনো বিবাহ বৈধ হতে পারে না।
শুধু বিবাহ-শাদি নয়, কাফির-মুশরিকদের সাথে বন্ধুত্ব,প্রেম-প্রীতি ও ভালবাসায় জড়িয়ে পড়া এবং যে কোনো ধরনের সম্পর্ক স্থাপনকেও আল্লাহ তাআলা কঠোর ভাবে নিন্দা করেছেন এবং তা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ করেছেন-
لَا تَجِدُ قَوْمًا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَادَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَوْ كَانُوا آَبَاءَهُمْ أَوْ أَبْنَاءَهُمْ أَوْ إِخْوَانَهُمْ أَوْ عَشِيرَتَهُمْ أُولَئِكَ كَتَبَ فِي قُلُوبِهِمُ الْإِيمَانَ وَأَيَّدَهُمْ بِرُوحٍ مِنْهُ
(তরজমা) যে জাতি আল্লাহ ও শেষ দিবসের উপর ঈমান রাখে তাদের আপনি কখনো দেখবেন না ওই সব লোকদের সাথে বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হতে, যারাআল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে মোকাবেলারত। হোকতারা তাদের পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি, ভাই-বেরাদর কিংবা আত্মীয়-স্বজন, ওদের অন্তরে আল্লাহ ঈমানকে বদ্ধমূল করেছেন এবং তাদেরকে তার রূহ দ্বারা শক্তিশালী করেছেন।-সূরা মুজাদালা (৫৮) : ২২
ইহুদী-খৃস্টান নারীদের বিবাহ করা
বাকি থাকল ইহুদী-খৃস্টানদের প্রসঙ্গ। এক্ষেত্রে কোনো মুসলিম মেয়েকে তাদের ছেলের কাছে বিয়ে দেওয়া তো এমনই হারাম যেমন মুশরিক মেয়েকে বিয়ে করা হারাম। তবে আহলে কিতাবের কোনো মেয়েকে কোনো মুসলিম পুরুষের জন্য বিয়ে করার বিষয়ে সূরা মায়েদা(আয়াত : ৫) শর্তসাপেক্ষে ছাড়ের বিধান রয়েছে। কিন্তুএ বিধানটি অনেকে ভুল বুঝে কিংবা ভুল প্রয়োগ করে।তাই এ বিষয়ে আলকাউসার রবীউস সানী ’২৮ হি., মে’০৭ ঈ. সংখ্যায় (পৃষ্ঠা : ০৯) বিস্তারিত একটি ফতোয়া প্রকাশিত হয়েছে। তা এখানে উদ্ধৃত হল :
‘‘মুসলিম ছেলেদের জন্য আহলে কিতাব মেয়েদেরকে বিবাহ করার বিষয়ে ইসলামী শরীয়তের হুকুম কয়েকভাগে বিভক্ত এবং বিভিন্ন শর্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যার দাবীদার। তাই বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে একটি ভূমিকাসহ কিছুটা বিস্তারিতভাবে জবাব পেশ করা হল।
ভূমিকা
অনেক মানুষকে বলতে শোনা যায় ‘মুসলমান ছেলেদের জন্য আহলে কিতাব মহিলাদের বিবাহ করা বৈধ।’ এটিএকটি ব্যাখ্যা বিহীন অসম্পূর্ণ কথা। কেউ কেউ একথাশুনে মনে করেন যে, যে কোনো ইহুদী-খৃস্টান মহিলাকে বিবাহ করা বৈধ। অথচ এ ধারণা নিতান্তই ভুল।
প্রকাশ থাকে যে, এ উত্তরপত্রে তিনটি শব্দ ব্যবহৃত হবে। (১) বিবাহ ‘সংগঠিত’ হওয়া (২) বিবাহ ‘না জায়েয’হওয়া (৩) বিবাহ ‘অনুত্তম’ হওয়া। এ তিনটি শব্দেরসংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা নিম্নরূপ :
বিবাহ ‘সংগঠিত’ হওয়ার অর্থ হচ্ছে, এ কাজসম্পাদনের পর ওই দম্পতির স্বামী-স্ত্রী সুলভ সম্পর্ক ব্যভিচার বলে গণ্য হবে না এবং তাদের সন্তান বৈধ বলে গণ্য হবে।
আর বিবাহ ‘না জায়েয’ হওয়ার অর্থ হচ্ছে, কাজটি করা শরীয়তের দৃষ্টিতে অবৈধ ও গোনাহের কাজ এবং তা থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।
আর বিবাহ ‘অনুত্তম’ বলে বুঝানো হয়েছে কাজটিসম্পূর্ণ অবৈধ না হলেও তা পরিত্যাজ্য এবং তা থেকে বেঁচে থাকা উচিত।
জেনে রাখা আবশ্যক যে, কোনো ইহুদী-খৃস্টান মহিলার সাথে বিবাহ শরীয়তের দৃষ্টিতে বিবাহ বলে গণ্য হওয়ার জন্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত রয়েছে। এদুটি শর্তের কোনোএকটি না পাওয়া গেলে সেটি বিবাহ বলেই গণ্য হবে না; বরং যিনা ও ব্যভিচার সাব্যস্ত হবে। তবে উভয় শর্ত পাওয়া গেলেই যে তাদেরকে বিবাহ করা বিনা দ্বিধায় নিঃশর্ত জায়েয ও বৈধ হয়ে যাবে বিষয়টি এমনও নয়;বরং বিবাহের পদক্ষেপ নেওয়ার পূর্বেই আরও কয়েকটি শর্তের উপস্থিতির ব্যাপারে আশ্বস্ত হওয়া আবশ্যক। যদি ওই শর্তগুলো না পাওয়া যায় তবে সেক্ষেত্রেও বিবাহ জায়েয হবে না। এর পরের কথা হল,এই শর্তগুলোও যথাযথ বিদ্যমান থাকলে বিবাহ তোজায়েয হয়ে যাবে, কিন্তু এ কাজ যে অবশ্যই মাকরূহ হবে তা তো বলাই বাহুল্য। ইসলামী শরীয়তে যেখানে মুসলিম নারীকে বিবাহ করার ক্ষেত্রেও নামাযী ওশরীয়তের অনুসারী নারীকে পছন্দ ও অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য বিশেষভাবে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে সেখানে যে মহিলা ইসলামের কালিমাকেই মানে না (যদিও সে আহলে কিতাব হয়ে থাকুক এবং বিবাহ সহীহ হওয়ার নির্ধারিত শর্তসমূহও বিদ্যমান থাকুক) তাকে বিবাহ করা কি আদৌ পছন্দনীয় হতে পারে?এখানে ভুল বোঝাবুঝির মূল কারণ এই যে, প্রধান দুইশর্ত সাপেক্ষে আহলে কিতাব মহিলার সঙ্গে বিবাহ শুদ্ধ হওয়াকেই জায়েয হওয়া বলে মনে করা হয়। অথচ বিবাহ শুদ্ধ হলেই জায়েয হয় না; বরং জায়েয হওয়ারজন্য ভিন্ন শর্ত রয়েছে। সেদিকে লক্ষ করা হয় না।এরপর বিবাহ জায়েয হওয়ার শর্তাবলি বিদ্যমান থাকা অবস্থায় যে বিবাহ সম্পন্ন হয়, তাকে মাকরূহ বিহীন বিবাহ ধারণা করা হয়ে থাকে; অথচ এ ধারণা সহীহ নয়। এজন্য নিম্নে আহলে কিতাব মহিলাদের বিবাহকরা সম্পর্কিত ইসলামের নির্দেশনা সমূহ তিনটি স্তরে কিছুটা বিশ্লেষণের সাথে তুলে ধরা হল। বিষয়টি যথাযথ ভাবে বুঝে নেওয়া আবশ্যক।
এক. বিবাহ শুদ্ধ হওয়ার শর্তাবলি
প্রথমেই জানা দরকার যে, এ যুগের অধিকাংশ ইহুদী ওখৃস্টান আহলে কিতাব নাম ধারীরা আদম শুমারীতে ওই দুই ধর্মের লোক বলে সরকারি ভাবে রেজিষ্ট্রিকৃত হলেও মূলত তারা কোনো আসমানী কিতাব বা ধর্মে বিশ্বাসীনয়; বরং ঘোষিত বা অঘোষিত ভাবে জড়বাদী ওবস্ত্ত বাদী নাস্তিকই বটে। তাই কোনো নারীর শুধু সরকারী খাতায় ধর্মাবলম্বী বলে নিবন্ধিত হওয়া কিংবা ইহুদী বা খৃস্টান নামধারী হওয়াই তার সাথে মুসলমান পুরুষের বিবাহ সহীহ শুদ্ধ হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়; বরংবিবাহ শুদ্ধ হওয়ার জন্য নিম্নোক্ত শর্তসমূহ পূর্বে যাচাইকরে নিতে হবে।
(১) মেয়েটি বস্ত্ত বাদী নাস্তিক না হতে হবে; বরং প্রকৃত অর্থে ইহুদী বা নাসারা তথা আহলে কিতাব হতে হবে। এজন্য তার মধ্যে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর উপস্থিতি জরুরি।(ক) আল্লাহ তাআলার সত্তা ও অস্তিত্ব স্বীকার করা। (খ)ইহুদী হলে মুসা আ. ও তাওরাতের উপর আর খৃস্টানহলে ঈসা আ. ও ইঞ্জিলের উপর ঈমান থাকা।
(২) মেয়েটি পূর্ব থেকেই ইহুদী বা খৃস্টান ধর্মে বিশ্বাসী হতে হবে। মুরতাদ, অর্থাৎ ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে ইহুদীবা খৃস্টান হয়েছে এমন না হতে হবে। তাই কোনোমুরতাদের ইহুদী-খৃস্টান মেয়ের সাথেও মুসলমানপূরুষের বিবাহ সংগঠিত হওয়ার সুযোগ নেই।
এসব শর্ত কোনো ইহুদী বা খৃস্টান মেয়ের মধ্যে পাওয়াগেলে শরীয়তের নিয়ম অনুযায়ী তাকে বিয়ে করলে বিবাহ শুদ্ধ বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ এ সকল শর্ত সাপেক্ষে বিবাহের আকদ করলে তাদের একত্রে থাকা ব্যভিচার হবে না; বরং তাদের মেলামেশা বৈধ ধরা হবে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, কেবল এ শর্তগুলো পাওয়াগেলেই তাদেরকে বিবাহ করা জায়েয তথা নিস্পাপ কাজ বলে গণ্য হবে; বরং সে জন্য দরকার আরও কয়েকটি শর্তের উপস্থিতি। যা পরবর্তী ধাপে বর্ণনা করাহচ্ছে। -আহকামুল কুরআন, জাস্সাস ২/৩২৩-৩২৬;তাফসীরে রূহুল মাআনী ৪/৬৪; ফাতহুল কাদীর৩/১৩৫; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৪৫, ৪/২৫৫-২৫৬;বাদায়েউস্ সানায়ে ৬/১২৫-১২৬; বুহুস ১/৪১৫;তাফসীরে মাজহারী ৩/৪২
দুই.
বিবাহ জায়েয হওয়ার শর্তাবলি
(১) ইহুদী-খৃস্টান মেয়েকে বিবাহের আগে এই বিষয়েপ্রবল আস্থা থাকতে হবে যে, এই বিবাহে স্বামীর দ্বীন-ধর্মের কোনো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই; বরং এই বিবাহের পরও সে ঈমান ও দ্বীনের উপর অটল থাকতে পারবে ইনশাআল্লাহ।
(২) এই ব্যাপারেও নিশ্চিত ধারণা ও আস্থা থাকতে হবে যে, এই দম্পিতির যে সন্তানাদি জন্মগ্রহণ করবে (মা আহলে কিতাব হওয়ার কারণে) তাদের দ্বীন-ঈমান রক্ষার ক্ষেত্রে কোনো বাধা শিক্ষা-দীক্ষা অনুযায়ী জীবন কাটাতে পারবে। পুরুষ অথবা তার ভবিষ্যত সন্তানদের ক্ষেত্রে উক্ত বিষয়ে কোনো আশঙ্কা থাকলে বিবাহ জায়েয হবে না।
(৩) বিবাহের আগে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে, যে রাষ্ট্রের মহিলাকে বিবাহ করার ইচ্ছা করছে সে রাষ্ট্রে সন্তানদেরকে মায়ের ধর্মের অনুসারী গণ্য করার আইন রয়েছে কি না। অর্থাৎ ‘মা অমুসলিম হলে সন্তানও অমুসলিম ধর্তব্য হবে’ এরকম আইন থাকলে সেখানে থেকে ওই মহিলাকে বিবাহ করা জায়েয হবে না।
(৪) তালাক বা স্বামীর ইন্তেকালের কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেলে সন্তানরা ধর্মের দিক থেকে মায়ের অনুসারী গণ্য হবে এবং স্বামী বা স্বামীর ওয়ারিশরা তাদের নিতে পারবে না-এই ধরনের কোনো আইন যেদেশে রয়েছে সে দেশে অবস্থিত কোনো আহলে কিতাব মহিলাকেও বিবাহ করা জায়েয হবে না।
(৫) যদি আলামত-প্রমাণের মাধ্যমে স্পষ্টত বোঝা যায়যে, এই বিবাহের কারণে ইসলামী রাষ্ট্র বা মুসলমানদের কোনো ক্ষতি হবে তাহলে এ বিবাহ থেকে দূরে থাকাআবশ্যক।
আন্তঃধর্মীয় বিবাহ আইনটি সম্পূর্ণ কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী একটি আইন।
কারণ আল্লাহ তাআলা শিরক ও কুফরি করে এমন নারী-পুরুষের সাথে মুসলমান নারী-পুরুষের বিবাহ হারাম করে দিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-
وَلَا تَنْكِحُوا الْمُشْرِكَاتِ حَتَّى يُؤْمِنَّ وَلَأَمَةٌ مُؤْمِنَةٌ خَيْرٌ مِنْ مُشْرِكَةٍ وَلَوْ أَعْجَبَتْكُمْ وَلَا تُنْكِحُوا الْمُشْرِكِينَ حَتَّى يُؤْمِنُوا وَلَعَبْدٌ مُؤْمِنٌ خَيْرٌ مِنْ مُشْرِكٍ وَلَوْ أَعْجَبَكُمْ أُولَئِكَ يَدْعُونَ إِلَى النَّارِ وَاللَّهُ يَدْعُو إِلَى الْجَنَّةِ وَالْمَغْفِرَةِ بِإِذْنِهِ وَيُبَيِّنُ آَيَاتِهِ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ
(তরজমা) তেমারা মুশরিক নারীদের বিয়ে করোনা যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। নিঃসন্দেহে একজন মুমিন দাসী যে কোনো মুশরিক নারীর চেয়ে অনেক উত্তম। যদিও এই মুশরিক নারীকে তোমাদের বেশি ভালো লাগে। আর তোমরা (তোমাদের নারীদের) মুশরিক পুরুষদের কাছে বিয়ে দিয়ো না। যতক্ষণ নাতারা ঈমান আনে। নিঃসন্দেহে একজন মুমিন দাস যেকোনো মুশরিক পুরুষের চেয়ে অনেক উত্তম। যদিও সেই মুশরিক পুরুষকে তোমাদের বেশি ভালো লাগে। কারণ তারা (মুশরিকরা) সকলে তো জাহান্নামের দিকে ডাকে আর আল্লাহ তার বিধানের মাধ্যমে জান্নাত ও মাগফিরাতের দিকে আহবান করেন। তিনি তার আয়াত সমূহ মানুষের উপকারার্থে স্পষ্টভাবে বর্ণনাকরেন, যাতে তারা তা অনুসরণ করতে পারে।-সূরাবাকারা (২) : ২২১
অন্য আয়াতে ইরশাদ করেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِذَا جَاءَكُمُ الْمُؤْمِنَاتُ مُهَاجِرَاتٍ فَامْتَحِنُوهُنَّ اللَّهُ أَعْلَمُ بِإِيمَانِهِنَّ فَإِنْ عَلِمْتُمُوهُنَّ مُؤْمِنَاتٍ فَلَا تَرْجِعُوهُنَّ إِلَى الْكُفَّارِ لَا هُنَّ حِلٌّ لَهُمْ وَلَا هُمْ يَحِلُّونَ لَهُنَّ.. وَلَا تُمْسِكُوا بِعِصَمِ الْكَوَافِرِ
(তরজমা) হে ঈমানদারগণ! যখন তোমাদের নিকট ঈমানদার নারীগণ হিজরত করে আসে তখন তোমরা তাদের পরীক্ষা কর। আল্লাহ অধিক জ্ঞাত তাদের ঈমানের ব্যাপারে। এরপর তোমরা যদি জানতে পার,তারা (হিজরত করে আসা নারীগণ) মুমিন তাহলে তাদেরকে কাফেরদের কাছে ফিরিয়ে দিও না। তারা (মুমিন নারীগণ) কাফেরদের জন্য বৈধ নয় এবংকাফেরগণও তাদের (মুমিন নারীদের) জন্য বৈধ নয় ...। আর তোমরা কাফের নারীদের সাথে দাম্পত্য সম্পর্ক বজায় রেখো না।-সূরা মুমতাহিনা (৬০) : ১০
উক্ত আয়াতদ্বয় দ্ব্যর্থহীনভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে,কোনো মুসলিম নারী কোনো অমুসলিম পুরুষের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে না। অনুরূপভাবে কোনো মুসলিম ব্যক্তি কোনো কাফের, মুশরিক নারীকে স্ত্রীরূপে গ্রহণ করতে পারে না। অর্থাৎ মুসলিম-অমুসলিমের কোনো বিবাহ বৈধ হতে পারে না।
শুধু বিবাহ-শাদি নয়, কাফির-মুশরিকদের সাথে বন্ধুত্ব,প্রেম-প্রীতি ও ভালবাসায় জড়িয়ে পড়া এবং যে কোনো ধরনের সম্পর্ক স্থাপনকেও আল্লাহ তাআলা কঠোর ভাবে নিন্দা করেছেন এবং তা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ করেছেন-
لَا تَجِدُ قَوْمًا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَادَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَوْ كَانُوا آَبَاءَهُمْ أَوْ أَبْنَاءَهُمْ أَوْ إِخْوَانَهُمْ أَوْ عَشِيرَتَهُمْ أُولَئِكَ كَتَبَ فِي قُلُوبِهِمُ الْإِيمَانَ وَأَيَّدَهُمْ بِرُوحٍ مِنْهُ
(তরজমা) যে জাতি আল্লাহ ও শেষ দিবসের উপর ঈমান রাখে তাদের আপনি কখনো দেখবেন না ওই সব লোকদের সাথে বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হতে, যারাআল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে মোকাবেলারত। হোকতারা তাদের পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি, ভাই-বেরাদর কিংবা আত্মীয়-স্বজন, ওদের অন্তরে আল্লাহ ঈমানকে বদ্ধমূল করেছেন এবং তাদেরকে তার রূহ দ্বারা শক্তিশালী করেছেন।-সূরা মুজাদালা (৫৮) : ২২
ইহুদী-খৃস্টান নারীদের বিবাহ করা
বাকি থাকল ইহুদী-খৃস্টানদের প্রসঙ্গ। এক্ষেত্রে কোনো মুসলিম মেয়েকে তাদের ছেলের কাছে বিয়ে দেওয়া তো এমনই হারাম যেমন মুশরিক মেয়েকে বিয়ে করা হারাম। তবে আহলে কিতাবের কোনো মেয়েকে কোনো মুসলিম পুরুষের জন্য বিয়ে করার বিষয়ে সূরা মায়েদা(আয়াত : ৫) শর্তসাপেক্ষে ছাড়ের বিধান রয়েছে। কিন্তুএ বিধানটি অনেকে ভুল বুঝে কিংবা ভুল প্রয়োগ করে।তাই এ বিষয়ে আলকাউসার রবীউস সানী ’২৮ হি., মে’০৭ ঈ. সংখ্যায় (পৃষ্ঠা : ০৯) বিস্তারিত একটি ফতোয়া প্রকাশিত হয়েছে। তা এখানে উদ্ধৃত হল :
‘‘মুসলিম ছেলেদের জন্য আহলে কিতাব মেয়েদেরকে বিবাহ করার বিষয়ে ইসলামী শরীয়তের হুকুম কয়েকভাগে বিভক্ত এবং বিভিন্ন শর্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যার দাবীদার। তাই বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে একটি ভূমিকাসহ কিছুটা বিস্তারিতভাবে জবাব পেশ করা হল।
ভূমিকা
অনেক মানুষকে বলতে শোনা যায় ‘মুসলমান ছেলেদের জন্য আহলে কিতাব মহিলাদের বিবাহ করা বৈধ।’ এটিএকটি ব্যাখ্যা বিহীন অসম্পূর্ণ কথা। কেউ কেউ একথাশুনে মনে করেন যে, যে কোনো ইহুদী-খৃস্টান মহিলাকে বিবাহ করা বৈধ। অথচ এ ধারণা নিতান্তই ভুল।
প্রকাশ থাকে যে, এ উত্তরপত্রে তিনটি শব্দ ব্যবহৃত হবে। (১) বিবাহ ‘সংগঠিত’ হওয়া (২) বিবাহ ‘না জায়েয’হওয়া (৩) বিবাহ ‘অনুত্তম’ হওয়া। এ তিনটি শব্দেরসংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা নিম্নরূপ :
বিবাহ ‘সংগঠিত’ হওয়ার অর্থ হচ্ছে, এ কাজসম্পাদনের পর ওই দম্পতির স্বামী-স্ত্রী সুলভ সম্পর্ক ব্যভিচার বলে গণ্য হবে না এবং তাদের সন্তান বৈধ বলে গণ্য হবে।
আর বিবাহ ‘না জায়েয’ হওয়ার অর্থ হচ্ছে, কাজটি করা শরীয়তের দৃষ্টিতে অবৈধ ও গোনাহের কাজ এবং তা থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।
আর বিবাহ ‘অনুত্তম’ বলে বুঝানো হয়েছে কাজটিসম্পূর্ণ অবৈধ না হলেও তা পরিত্যাজ্য এবং তা থেকে বেঁচে থাকা উচিত।
জেনে রাখা আবশ্যক যে, কোনো ইহুদী-খৃস্টান মহিলার সাথে বিবাহ শরীয়তের দৃষ্টিতে বিবাহ বলে গণ্য হওয়ার জন্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত রয়েছে। এদুটি শর্তের কোনোএকটি না পাওয়া গেলে সেটি বিবাহ বলেই গণ্য হবে না; বরং যিনা ও ব্যভিচার সাব্যস্ত হবে। তবে উভয় শর্ত পাওয়া গেলেই যে তাদেরকে বিবাহ করা বিনা দ্বিধায় নিঃশর্ত জায়েয ও বৈধ হয়ে যাবে বিষয়টি এমনও নয়;বরং বিবাহের পদক্ষেপ নেওয়ার পূর্বেই আরও কয়েকটি শর্তের উপস্থিতির ব্যাপারে আশ্বস্ত হওয়া আবশ্যক। যদি ওই শর্তগুলো না পাওয়া যায় তবে সেক্ষেত্রেও বিবাহ জায়েয হবে না। এর পরের কথা হল,এই শর্তগুলোও যথাযথ বিদ্যমান থাকলে বিবাহ তোজায়েয হয়ে যাবে, কিন্তু এ কাজ যে অবশ্যই মাকরূহ হবে তা তো বলাই বাহুল্য। ইসলামী শরীয়তে যেখানে মুসলিম নারীকে বিবাহ করার ক্ষেত্রেও নামাযী ওশরীয়তের অনুসারী নারীকে পছন্দ ও অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য বিশেষভাবে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে সেখানে যে মহিলা ইসলামের কালিমাকেই মানে না (যদিও সে আহলে কিতাব হয়ে থাকুক এবং বিবাহ সহীহ হওয়ার নির্ধারিত শর্তসমূহও বিদ্যমান থাকুক) তাকে বিবাহ করা কি আদৌ পছন্দনীয় হতে পারে?এখানে ভুল বোঝাবুঝির মূল কারণ এই যে, প্রধান দুইশর্ত সাপেক্ষে আহলে কিতাব মহিলার সঙ্গে বিবাহ শুদ্ধ হওয়াকেই জায়েয হওয়া বলে মনে করা হয়। অথচ বিবাহ শুদ্ধ হলেই জায়েয হয় না; বরং জায়েয হওয়ারজন্য ভিন্ন শর্ত রয়েছে। সেদিকে লক্ষ করা হয় না।এরপর বিবাহ জায়েয হওয়ার শর্তাবলি বিদ্যমান থাকা অবস্থায় যে বিবাহ সম্পন্ন হয়, তাকে মাকরূহ বিহীন বিবাহ ধারণা করা হয়ে থাকে; অথচ এ ধারণা সহীহ নয়। এজন্য নিম্নে আহলে কিতাব মহিলাদের বিবাহকরা সম্পর্কিত ইসলামের নির্দেশনা সমূহ তিনটি স্তরে কিছুটা বিশ্লেষণের সাথে তুলে ধরা হল। বিষয়টি যথাযথ ভাবে বুঝে নেওয়া আবশ্যক।
এক. বিবাহ শুদ্ধ হওয়ার শর্তাবলি
প্রথমেই জানা দরকার যে, এ যুগের অধিকাংশ ইহুদী ওখৃস্টান আহলে কিতাব নাম ধারীরা আদম শুমারীতে ওই দুই ধর্মের লোক বলে সরকারি ভাবে রেজিষ্ট্রিকৃত হলেও মূলত তারা কোনো আসমানী কিতাব বা ধর্মে বিশ্বাসীনয়; বরং ঘোষিত বা অঘোষিত ভাবে জড়বাদী ওবস্ত্ত বাদী নাস্তিকই বটে। তাই কোনো নারীর শুধু সরকারী খাতায় ধর্মাবলম্বী বলে নিবন্ধিত হওয়া কিংবা ইহুদী বা খৃস্টান নামধারী হওয়াই তার সাথে মুসলমান পুরুষের বিবাহ সহীহ শুদ্ধ হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়; বরংবিবাহ শুদ্ধ হওয়ার জন্য নিম্নোক্ত শর্তসমূহ পূর্বে যাচাইকরে নিতে হবে।
(১) মেয়েটি বস্ত্ত বাদী নাস্তিক না হতে হবে; বরং প্রকৃত অর্থে ইহুদী বা নাসারা তথা আহলে কিতাব হতে হবে। এজন্য তার মধ্যে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর উপস্থিতি জরুরি।(ক) আল্লাহ তাআলার সত্তা ও অস্তিত্ব স্বীকার করা। (খ)ইহুদী হলে মুসা আ. ও তাওরাতের উপর আর খৃস্টানহলে ঈসা আ. ও ইঞ্জিলের উপর ঈমান থাকা।
(২) মেয়েটি পূর্ব থেকেই ইহুদী বা খৃস্টান ধর্মে বিশ্বাসী হতে হবে। মুরতাদ, অর্থাৎ ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে ইহুদীবা খৃস্টান হয়েছে এমন না হতে হবে। তাই কোনোমুরতাদের ইহুদী-খৃস্টান মেয়ের সাথেও মুসলমানপূরুষের বিবাহ সংগঠিত হওয়ার সুযোগ নেই।
এসব শর্ত কোনো ইহুদী বা খৃস্টান মেয়ের মধ্যে পাওয়াগেলে শরীয়তের নিয়ম অনুযায়ী তাকে বিয়ে করলে বিবাহ শুদ্ধ বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ এ সকল শর্ত সাপেক্ষে বিবাহের আকদ করলে তাদের একত্রে থাকা ব্যভিচার হবে না; বরং তাদের মেলামেশা বৈধ ধরা হবে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, কেবল এ শর্তগুলো পাওয়াগেলেই তাদেরকে বিবাহ করা জায়েয তথা নিস্পাপ কাজ বলে গণ্য হবে; বরং সে জন্য দরকার আরও কয়েকটি শর্তের উপস্থিতি। যা পরবর্তী ধাপে বর্ণনা করাহচ্ছে। -আহকামুল কুরআন, জাস্সাস ২/৩২৩-৩২৬;তাফসীরে রূহুল মাআনী ৪/৬৪; ফাতহুল কাদীর৩/১৩৫; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৪৫, ৪/২৫৫-২৫৬;বাদায়েউস্ সানায়ে ৬/১২৫-১২৬; বুহুস ১/৪১৫;তাফসীরে মাজহারী ৩/৪২
দুই.
বিবাহ জায়েয হওয়ার শর্তাবলি
(১) ইহুদী-খৃস্টান মেয়েকে বিবাহের আগে এই বিষয়েপ্রবল আস্থা থাকতে হবে যে, এই বিবাহে স্বামীর দ্বীন-ধর্মের কোনো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই; বরং এই বিবাহের পরও সে ঈমান ও দ্বীনের উপর অটল থাকতে পারবে ইনশাআল্লাহ।
(২) এই ব্যাপারেও নিশ্চিত ধারণা ও আস্থা থাকতে হবে যে, এই দম্পিতির যে সন্তানাদি জন্মগ্রহণ করবে (মা আহলে কিতাব হওয়ার কারণে) তাদের দ্বীন-ঈমান রক্ষার ক্ষেত্রে কোনো বাধা শিক্ষা-দীক্ষা অনুযায়ী জীবন কাটাতে পারবে। পুরুষ অথবা তার ভবিষ্যত সন্তানদের ক্ষেত্রে উক্ত বিষয়ে কোনো আশঙ্কা থাকলে বিবাহ জায়েয হবে না।
(৩) বিবাহের আগে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে, যে রাষ্ট্রের মহিলাকে বিবাহ করার ইচ্ছা করছে সে রাষ্ট্রে সন্তানদেরকে মায়ের ধর্মের অনুসারী গণ্য করার আইন রয়েছে কি না। অর্থাৎ ‘মা অমুসলিম হলে সন্তানও অমুসলিম ধর্তব্য হবে’ এরকম আইন থাকলে সেখানে থেকে ওই মহিলাকে বিবাহ করা জায়েয হবে না।
(৪) তালাক বা স্বামীর ইন্তেকালের কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেলে সন্তানরা ধর্মের দিক থেকে মায়ের অনুসারী গণ্য হবে এবং স্বামী বা স্বামীর ওয়ারিশরা তাদের নিতে পারবে না-এই ধরনের কোনো আইন যেদেশে রয়েছে সে দেশে অবস্থিত কোনো আহলে কিতাব মহিলাকেও বিবাহ করা জায়েয হবে না।
(৫) যদি আলামত-প্রমাণের মাধ্যমে স্পষ্টত বোঝা যায়যে, এই বিবাহের কারণে ইসলামী রাষ্ট্র বা মুসলমানদের কোনো ক্ষতি হবে তাহলে এ বিবাহ থেকে দূরে থাকাআবশ্যক।
উপরোক্ত শর্তগুলোর দিকে সূরা মায়েদার ৫নং আয়াতের শেষাংশে ইঙ্গিত রয়েছে। বিধর্মী রাষ্ট্রের ইহুদী-খৃস্টানদের মধ্যে যেহেতু সাধারণত উপরোক্তশর্তগুলো পাওয়া যায় না তাই ফুকাহায়ে কেরাম ঐক্যবদ্ধ ভাবে এই ফতোয়া দিয়েছেন যে, বিধর্মী রাষ্ট্রের কোনো আহলে কিতাব মহিলাকে বিবাহ করা মাকরূহে তাহরীমী; তথা না জায়েয ও গোনাহের কাজ। কোনো আহলে কিতাব মহিলা যদি ইসলামী রাষ্ট্রের অধিবাসী হয়ে থাকে এবং উপরোক্ত শর্তগুলো পরিপূর্ণভাবেপাওয়া যায় তাহলে বিবাহ যদিও সংঘটিত হয়ে যাবে কিন্তু তা হবে খুবই অনুত্তম কাজ। উপরোক্ত আলোচনার স্বপক্ষে কিছু নির্ভরযোগ্য দলীল প্রামাণ নিম্নে পেশ করা হল,
قال ابن عباس : لا يحل نساء أهل الكتاب إذا كانوا حربا.
প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রা.বলেন, ‘আহলে কিতাব মহিলাগণ ‘হারবী’ তথা কাফের রাষ্ট্রের অধিবাসিনী হলে তাদের সাথে বিবাহ বন্ধন হালাল নয়।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস :১৬৪৩১
প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রা.বলেন, ‘আহলে কিতাব মহিলাগণ ‘হারবী’ তথা কাফের রাষ্ট্রের অধিবাসিনী হলে তাদের সাথে বিবাহ বন্ধন হালাল নয়।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস :১৬৪৩১
وتكره كتابية الحربية إجماعا، لانتفاح باب الفتنة من إمكان التعلق المستدعي للمقام معها في دار الحرب، و تعريض الولد على التخلق بأخلاف أهل الكفر.
সুপ্রসিদ্ধ ফক্বীহ আল্লামা ইবনে হুমাম রহ. (মৃত : ৮৬১হি.) বলেন, কাফের রাষ্ট্রের আহলে কিতাব মহিলাকে বিয়ে করা ফিকাহবিদদের সর্বসম্মতি ক্রমে মাকরূহে(তাহরীমী বা না জায়েয)। কারণ স্বামীকে কাফের রাষ্ট্রেতার সাথে বসবাস করতে হবে। ফলে সকল প্রকার ফিতনার দ্বার উন্মুক্ত হয়ে যাবে এবং এতে সন্তানদেরকে কাফেরদের সমাজে তাদের মতো করে বেড়ে উঠতে বাধ্য করা হবে।-ফাতহুল কাদীর ৩/১৩৫
সুপ্রসিদ্ধ ফকীহ আল্লামা দারদীর রহ. বলেন, কাফের রাষ্ট্রের আহলে কিতাব মেয়েকে বিয়ে করা আরও কঠিন ভাবে নিন্দনীয়। কারণ মুসলিম রাষ্ট্রের আহলে কিতাব মহিলার চেয়ে এদের ক্ষমতা অনেক বেশিথাকে। ফলে মহিলাটি সন্তানদেরকে স্বীয় ধর্মের উপর লালিত পালিত করতে থাকবে এবং সন্তানের পিতাকেএ ব্যাপারে সে কোনো পরওয়াই করবে না।-আশশারহুস সাগীর ১/৪০৬
বিখ্যাত ফকীহ আল্লামা শারবীনী রহ. বলেন, কিন্তু যেসকল আহলে কিতাব মহিলা কাফের রাষ্ট্রে থাকে তাদেরকে বিবাহ করা মাকরূহ (তাহরীমী)। তদ্রূপবি শুদ্ধ মতানুযায়ী মুসলমান দেশে বসবাস কারিনী আহলে কিতাব মহিলাকে বিয়ে করা দোষনীয়; ফিতনার আশঙ্কার কারণে। কিন্তু মুসলিম রাষ্ট্রের চেয়ে কাফের রাষ্ট্রের অধিবাসিনীকে বিয়ে করা অধিক গর্হিত কাজ।-মুগনীল মুহতাজ ৩/১৮৭
জামেয়া আজহারের প্রখ্যাত শায়খ আব্দুল্লাহ আলগুমারী রহ. বলেন, কাফের রাষ্ট্রের আহলে কিতাবমহিলাদেরকে বিয়ে করার বড় একটি খারাবী হল,সন্তানাদি মার মতোই খৃস্টান হয়ে যায়। কারণ পিতারমৃত্যু ঘটলে মা নিজের ধর্মের অনুসারী করেসন্তানদেরকে লালন করতে থাকে। আর যদি স্বামীতালাক দিয়ে দেয় তাহলে রাষ্ট্রীয় আইনে স্বামী সন্তাননিয়ে যাওয়ার অনুমতি পায় না। ফলে সন্তানরা মারসাথে থেকে তার ধর্মেই দিক্ষিত হয়।-দফউশ্ শক ১৯
এরপর তিনি (শায়খ আব্দুল্লাহ) বেশ কিছু বাস্তবঘটনার উদাহরণ নিয়ে এসেছেন, যেগুলোতে দেখাগেছে যে, সন্তানরাও তাদের মায়ের ধর্মাবলম্বী হয়েই বড়হয়ে উঠেছে ও আহলে কিতাব হয়ে গেছে।
আরও দ্রষ্টব্য : আহকামুল কুরআন, জাস্সাস ২/৩২৬;আহকামুল কুরআন, থানভী ১/৪০৪; তাফসীরেমাজহারী ৩/৪১; তাতার খানিয়া ৩/৭
তিন.
মুসলিম রাষ্ট্রে বসবাসকারিনী ইহুদী-খৃস্টানকে বিবাহের হুকুম
আহলে কিতাব নারী যদি মুসলমান রাষ্ট্রেবসবাস কারিনী হয় এবং তাদেরকে বিয়ে করলে স্বামী বা সন্তান বিধর্মী হওয়ার আশঙ্কা নাও থাকে তবুও সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, আইম্মায়ে মুজতাহিদীন ও চার মাযহাবের ফেকাহ বিদগণ ঐকমত্যের ভিত্তিতে তাদেরকে বিয়ে করা মাকরূহ বলেছেন।
সাহাবী হুযায়ফা রা. এক ইহুদী মহিলাকে বিয়ে করে ছিলেন। হযরত উমর রা. পত্র মারফত ওই মেয়েকে ছেড়ে দেওয়ার পারমর্শ দিলেন। তখন তিনি লিখে পাঠালেন, যদি তাকে বিয়ে করা হারাম হয়ে থাকে তাহলে আমি ছেড়ে দিব। উত্তরে হযরত উমর রা; জানালেন,আমি হারাম হওয়ার কথা বলি না, তবে আমার আশঙ্কা হয় এভাবে তাদের ব্যভিচারিনী দেরকেও বিবাহ করাশুরু হবে।-ইবনে আবি শাইবা, হা : ১৬৪১৭
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, ‘হুযায়ফা রা. হযরত উমর রা.-এর শাসন আমলে এক ইহুদী মহিলাকে বিয়ে করেন। তখন উমর রা. তাকে বললেন, ‘তুমি ওই মেয়েকে তালাক দিয়ে দাও। কারণ সে হল অগ্নিকুন্ড।’-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস : ১০০৫৭
এ ঘটনার কিছু দিন পর হযরত হুযায়ফা রা. ওইমেয়েকে তালাক দিয়ে দেন।
হযরত ত্বলহা রা. জনৈক ইহুদী মহিলাকে বিয়ে করলেখলিফা হযরত উমর রা. তাকে তালাক দিতে বাধ্যকরেন।-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস : ১০০৫৯
হযরত উমর রা.-এর যুগ স্বর্ণযুগের অন্তুর্ভুক্ত। তার প্রশাসনের অধীনে বসবাস কারিনী আহলে কিতাব মহিলার বিয়ের ব্যাপারে যদি তার এ অভিমত হয়ে থাকে তবে বর্তমান যুগে ইহুদী-খৃস্টান নারীদের অবস্থা দেখলে তিনি কি হুকুম দিতেন তা সহজেই অনুমেয়।
হযরত উমর রা.-এর যুগ স্বর্ণযুগের অন্তুর্ভুক্ত। তার প্রশাসনের অধীনে বসবাস কারিনী আহলে কিতাব মহিলার বিয়ের ব্যাপারে যদি তার এ অভিমত হয়ে থাকে তবে বর্তমান যুগে ইহুদী-খৃস্টান নারীদের অবস্থা দেখলে তিনি কি হুকুম দিতেন তা সহজেই অনুমেয়।
হযরত হাসান রা.কে একদা আহলে কিতাব মহিলাকে বিয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তিনি এর জবাবে বলে ছিলেন, আহলে কিতাব মহিলাকে কেন বিবাহ করতে হবে? অথচ আল্লাহ তাআলা প্রচুর মুসলমান রমণী রেখেছেন।-রুহুল মাআনী ৪/৬৬
আল্লামা জাস্সাস রহ. তাদের নারীকে বিয়ে করা মাকরূহ হওয়ার আরেকটি কারণও বর্ণনা করেছেন যে,আল্লাহ তাআলার ইরশাদ (তরজমা) যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে তাদেরকে আপনি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ কারীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না।-সূরা আলমুজাদালাহ ২২
আর বিবাহ যে ভালোবাসা সৃষ্টি করে এটা তো বলাইবাহুল্য।-আহকামুল কুরআন, জাস্সাস ২/৩২৬
এছাড়াও চার মাযহাবের ফকীহগণ ঐকমত্যের ভিত্তিতে মুসলিম দেশে বসবাসকারিনী আহলে কিতাব মহিলাদেরকেও বিয়ে করা মাকরূহ তথা অনুত্তম বলেছেন।-আদদুররুল মুখতার ৩/৪৫; ফাতহুল কাদীর৩/১৩২-১৩৬; আলমুগনী ৬/৫৯০; আলমুফাস্সাল৭/১৮-১৯; আহকামুল কুরআন, জাস্সাস ২/৩২৪;আহকামুল কুরআন থানভী ১/৪০৫
পুরো বিষয়টির জন্য আরও দেখা যেতে পারে :তাফসীরে ইবনে কাসীর ২/৩০; তাফসীরে কুরতুবী৩/৫১; মাআরিফুল কুরআন ৩/৬০-৬৪; আলমাবসুত৪/২১০; আলমুহীতুল বুরহানী ৪/১১০; আল বাহরুররায়েক ৩/১০৩; আননাহরুল ফায়েক ২/১৯৪; ফাতহুলকাদীর ৩/১৩৫-১৩৬; আলমুফাস্সাল ৭/১২-২৪;দাফউশ্শাক্কি ওয়াল ইরতিয়াব, আব্দুল্লাহ আলগুমারীরহ.।’’
আল্লামা জাস্সাস রহ. তাদের নারীকে বিয়ে করা মাকরূহ হওয়ার আরেকটি কারণও বর্ণনা করেছেন যে,আল্লাহ তাআলার ইরশাদ (তরজমা) যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে তাদেরকে আপনি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ কারীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না।-সূরা আলমুজাদালাহ ২২
আর বিবাহ যে ভালোবাসা সৃষ্টি করে এটা তো বলাইবাহুল্য।-আহকামুল কুরআন, জাস্সাস ২/৩২৬
এছাড়াও চার মাযহাবের ফকীহগণ ঐকমত্যের ভিত্তিতে মুসলিম দেশে বসবাসকারিনী আহলে কিতাব মহিলাদেরকেও বিয়ে করা মাকরূহ তথা অনুত্তম বলেছেন।-আদদুররুল মুখতার ৩/৪৫; ফাতহুল কাদীর৩/১৩২-১৩৬; আলমুগনী ৬/৫৯০; আলমুফাস্সাল৭/১৮-১৯; আহকামুল কুরআন, জাস্সাস ২/৩২৪;আহকামুল কুরআন থানভী ১/৪০৫
পুরো বিষয়টির জন্য আরও দেখা যেতে পারে :তাফসীরে ইবনে কাসীর ২/৩০; তাফসীরে কুরতুবী৩/৫১; মাআরিফুল কুরআন ৩/৬০-৬৪; আলমাবসুত৪/২১০; আলমুহীতুল বুরহানী ৪/১১০; আল বাহরুররায়েক ৩/১০৩; আননাহরুল ফায়েক ২/১৯৪; ফাতহুলকাদীর ৩/১৩৫-১৩৬; আলমুফাস্সাল ৭/১২-২৪;দাফউশ্শাক্কি ওয়াল ইরতিয়াব, আব্দুল্লাহ আলগুমারীরহ.।’’
কথা গুলো সঠিক । বর্তমান সরকারের আইন অনুযায়ী এটা প্রমাণ এই যে গরু ছাগলের যেমন ধর্ম হীন সামাজিক জ কার্যকলাপ ঠিক তেমনি মুসলমানদের ভিতরে এই আইন কার্যকর করার চেষ্টা করা হচ্ছে ।
ReplyDelete