বুখারী হাদীস নং ১৮৮৩। ‘আবদুল্লাহ ইবনুূু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন , যে ব্যাক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াব লাভের আশায় তারাবীহর সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়াবে তার পূর্ববর্তী গোনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে।
হাদীসের রাবী ইবনুূু শিহাব (রহঃ) বলেন , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করেন এবং তারাবীহর ব্যাপারটি এ ভাবেই চালু ছিল। এমনকি আবূ বাকর (রাঃ) -এর খিলাফতকালে ও ‘উমর (রাঃ) -এর খিলাফতের প্রথম ভাগে এরূপই ছিল। ইবনুূু শিহাব (রহঃ)‘উরওয়া ইবনুূু যুবায়র (রহঃ) সূত্রে ‘আব্দুর রাহমান ইবনুূু ‘আবদ আল -ক্বারী (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন , তিনি বলেন , আমি রমযানের এক রাতে ‘উমর ইবনুূুল খাত্তাব (রাঃ) -এর সঙ্গে মসজিদে নববীতে গিয়ে দেখতে পাই যে , লোকেরা বিক্ষিপ্ত জামায়াতে বিভক্ত। কেউ একাকী সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছে আবার কোন ব্যাক্তি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছে এবং তার ইকতেদা করে একদল লোক সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছে। ‘উমর (রাঃ) বললেন , আমি মনে করি যে , এই লোকদের যদি আমি একজন ক্বারীর (ইমামের )পিছনে একত্রিত করে দিই , তবে তা উত্তম হবে। এরপর তিনি উবাই ইবনুূু কা‘ব (রাঃ) -এর পিছনে সকলকে একত্রিত করে দিলেন। পরে আর এক রাতে আমি তাঁর [‘উমর (রাঃ) ] সঙ্গে বের হই। তখন লোকেরা তাদের ইমামের সাথে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিল। ‘উমর (রাঃ) বললেন , কত না সুন্দর এই নতুন ব্যবস্থা! তোমরা রাতের যে অংশে ঘুমিয়ে থাক তা রাতের ঐ অংশ অপেক্ষা উত্তম যে অংশে তোমরা সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর, এর দ্বারা তিনি শেষ রাত বুষিয়েছেন , কেননা তখন রাতের প্রথমভাগে লোকেরা সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করত।
লা-সাযহাবীদের অনেকেই শরীয়তের প্রমাণাদির পরিপন্হী এই বেদআতের প্রচলন করার জন্য অমূলক কথাগুলোর আশ্রয় নিয়ে বলে থাকে তারাবির নামাজ আট রাকাআত। বাস্থবে এর কোন সহীহ হাদীস এমনকি শরীয়তের কোন দলীল নেই।
ক. তারা দাবী করে থাকে যে, আট রাকাআত তারাবীর হাদীস সহীহ বুখারীতে আছে। অথচ সহীহ বুখারীর হাদীসটি তাহাজ্জুদের ব্যাপারে, তারাবীর ব্যাপারে নয়। নিচে হাদীসটি দেওয়া হলো:
“আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান (রহ:) থেকে বর্ণিত, তিনি হযরত আয়েশা (রা:)কে জিজ্ঞেস করেন, রমযান মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামায কেমন হত?হযরত আয়েশা (রা) বলেন, তিনি রমযানে ও রমযানের বাইরে এগারো রাকাআতের অধিক পড়তেন না। চার রাকাআত পড়তেন, এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতার কথা তোমাকে কী বলব ! এরপর চার রাকাআত পড়তেন, যারদীর্ঘতা ও সৌন্দর্য হত অতুলনীয়। এরপর তিন রাকাআত পড়তেন।”
— সহীহ বুখারী, হাদীস নং২০১৩,১১৪৭,৩৫৬৯, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং৩৭৩/১২৫
নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, উপরোক্ত হাদীসে ঐ নামাযের কথা উল্লেখিত হয়েছে, যা রমযান ও অণ্যাণ্য মাস তথা সারা বছর আদায় করা হয়। বলাবাহুল্য যে, তা হল তাহাজ্জুদের নামায। অতএব তাহাজ্জুদের নামাযের ব্যাপারে আম্মাজান হযরত আয়েশা (রা) বলেছেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চার রাকাআত করে আট রাকাআত পড়তেন। এরপর বিতর পড়তেন।
হাদীসের উদ্দেশ্য হল, সাধারণভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদের নামাজ আট রাকাআত পড়তেন। হাদীসের অর্থ এই নয় যে, নবীজী সর্বদাই তাহাজ্জুদের নামাজ আট রাকাআত পড়তেন। কেননা আম্মাজান হযরত আয়েশা (রা) থেকে সহীহ বুখারীর অপর বর্ণনায় এসছে, রাসুললুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিয়ামুল লােইল তথা তাহাজ্জুদের নামায তের রাকাআত পড়তেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১১৬৪, ফাতহুল বারী:৩/২৬, কিতাবুত তাহাজ্জুদ, বাব-১০
বিভিন্ন সহীহ হাদীসের আলোকে এ কথাও প্রমাণিত যে,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাতের নামায (ইশার দু রাকাআত সুন্নত ও বিতর ছাড়াই) কখনো কখনো ১৪বা ১৬ রাকাআতও হত। বরং কোন কোন বর্ণনা থেকে ১৮ রাকাআতের কথাও বুঝে আসে। (নাইলুর আওতার: ৩/২১-২২, হাদীস ৮৯৭; আত-তারাবীহ আকসারু মিন আলফি আমিন ফিল মাসজিদিন নাবিয়্যি: ২১-২৩)
বুঝা গেল,তারাবীহ তো দুরের কথা খোদ ’কিয়ামুল লাইল’-এর ব্যাপারেও এ কথা বলা ঠিক নয় যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর ব্যতীত সর্বদা আট রাকাআত পড়তেন।
খ. তাদের কেউ কেউ বলে থাকে যে, আট রাকাআত তারবীর হাদীস হযরত জাবের (রা:) এর বর্ণনায় ইবনে হিব্বান ও অন্যান্য হাদীসগ্রন্হে রয়েছে, যা একটি সহীহ হাদীস।
বাস্তব কথা হল, হাদীসটি সহীহ নয় বরং তা যয়ীফ হওয়ার পাশাপাশি মুনকারও বটে। অর্থাৎ তা যয়ীফের মধ্যেও নিম্নমানের। হাদীসটির বর্ণনাকারীদের মধ্যে রয়েছে ‘ইয়াকুব আলকুম্মী’; এ একজন শিয়া। অপর একজন হল ‘ইসা ইবনে জারিয়া’; যার ব্যাপারে রিজালশাস্ত্রের ইমামদের মন্তব্য হল, সে ‘মাতরূক’ ও ‘মুনকারুল হাদীস’। ইমাম আবু দাউদ (রহ), ইমাম নাসায়ী (রহ) প্রমুখ একথা বলেছেন। অর্থাৎ তার বর্ণনা ‘প্রমাণ প্রদানের ক্ষেত্রে তো নয়ই, ‘সমর্থন’ হিসেবেও উদ্ধৃত করা চলে না। কেননা তার ব্যাপারে আপত্তিজনক কথাবার্তা হাদীস হিসেবে বর্ণনা করার অভিযোগ রয়েছে।
দ্রষ্টব্য: তাহযীবুল বামাল: ১৪/৫৩৩-৫৩৪, তাহযীবুত তাহযীর: ৮/২০৭; আল-কামেল, ইবনে আদী: ৬/৪৩৬-৪৩৮
ইমাম ইবনে আদী (রহ) ঈসা ইবনে জারিয়ার আলোচনায় এই হাদীস উল্লেখ করে স্পষ্ট বলেছেন, হাদীসটি ‘মাহফুয নয়’। এ শব্দ (,াহফুয নয়) দ্বারা ইমাম ইবনে আদী (রহ)-এর উদ্দেশ্য হয়ে থাকে যে, সংশ্লিষ্ট হাদীসটি মওযূ বা মুনকার। অর্থাৎ তা দ্বারা প্রশাণ দেয়ার প্রশ্নই আসে না।
তাছাড়া এই মুনকার বর্ণনাটির মধ্যেও স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, তা শুধু এক রাতের ঘটনা ছিল। (কিয়ামুল লাইল, ইবনে নাসর:১৯৭
গ. কেউ কেউ এ সম্পর্কে হযরত উবাই (রা) এর প্রতি সম্বন্ধকৃত একটি ঘটনারও উল্লেখ করে থাকেন, যাতে আট রাকাআতের কথা উল্লেখ রয়েছে। অথচ এ কথাই নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত নয় যে, তা রমযান মাসের ঘটনা. নাকি অন্য মাসের। যদি রমযান মাসের হয়ে থাকে তাহলে তা তাহাজ্জুদের ঘটনা, নাকি তারাবীর। তাছাড়া সবচেয়ে বড় কথা হলো যে, এ বর্ণনাটিও সেই ’ঈসা ইবনে জারিযা ‘ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে; যাকে বিজ্ঞ মুহাদ্দেসীনে কেরাম ‘মাতরূক’ ও ’মুনকারুল হাদীস’ আখ্যা দিয়েছেন। (রাকাআতে তারাবীহ, মুহাদ্দেস হাবীবুর রহমান আযমী:৩৬-৩৭)
১. ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিমের উস্তাদ আবু বকর ইবনে আবী শাইবা (রহ:) সংকলিত হাদীসগ্রন্হ “আল-মুসান্নাফ”-এ রয়েছে: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত, “রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসে বিশ রাকাআত তারাবীহ এবং বিতর পড়তেন।” -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা: ২/২৮৮; আল-মুনতাখাব মিন মুসনাদি আবদ ইবনে হুমাইদ:২১৮, হাদীস ৬৫৩; সুনানে…
সমগ্র মুসলিম উম্মাহ এ ব্যপারে একমত যে, তারাবীর নামায ন্যন্যতম ২০ রাকাআত। সালফে-সালেহীন ও পূর্ববর্তীদের অনেকে (নফলসহ) ৩৬ বা ৮০ রাকাআত পড়তেন; কিনতউ সালফ ও খলফ তথা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী কোন ইমামই ২০ রাকাআতের চেয়ে কম পড়ার মত পোষণ করেন নি। এ ব্যাপারে সমগ্র মুসলিম উম্মাহর ‘ইজমা’ (ঐক্যমত্য) রয়েছে।
তারাবীর সালাত ৮ রাকাত নাকি ২০ রাকাত...
ReplyDeleteমধ্য প্রাচ্চের দেশ গুলতে ও দেখেছি ৮ রাকাত করে তারাবীর সালাত পরতে, তাহলে কি তারা ভূল?
অনেক বিভ্রান্তি তে থাকি, এই বেপারটা নিয়ে।