>> রমযান মাসে সহবাসের পর রোযা পালন সম্পর্কে কয়েকটি সহীহ হাদীস<<
>> সহিহ বুখারী ১৮০৮।
ইসমা‘ঈল (রহঃ) আবূ বাকর ইবনুূু ‘আব্দুর রহমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন, আমি আমার পিতার সঙ্গে রওয়ানা হয়ে ‘আয়িশা (রাঃ) -এর নিকট পৌছলাম। তিনি বললেন , আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে সাক্ষ্য দিচ্ছি , তিনি ইহতিলাম ছাড়া স্ত্রী সহবাসের কারণে জুনুবী অবস্থায় সকাল পর্যন্ত থেকেছেন এবং এরপর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেছেন। তারপর আমরা উম্মে সালামা (রাঃ) -এর নিকট গেলাম। তিনিও অনুরূপ কথাই বললেন। আবূ জা‘ফর বলেন , ‘আবদুল্লাহ (রহঃ)- কে আমি জিজ্ঞাসা করলাম , কোন ব্যাক্তি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ভঙ্গ করলে সে কি স্ত্রী সহবাসকারীর মত কাফ্ফারা আদায় করবে? তিনি বললেন, না; তুমি কি সে হাদীসগুলো সম্পর্কে জানো না যাতে বর্ণিত আছে যে, যুগ যুগ ধরে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করলেও তার কাযা আদায় হবে না?
>> সহীহ বুখারী ১৮১৩।
‘উসমান ইবনুূু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল , এই হতভাগা স্ত্রী সহবাস করেছে রমজানে। তিনি বললেনঃ তুমি কি একটি গোলাম আজাদ করতে পারবে? লোকটি বলল, না। তিনি বললেনঃ তুমি কি ক্রমাগত দু’মাস সিয়াম পালন করতে পারবে? লোকটি বলল , না। তিনি বললেন :তুমি কি ষাটজন মিসকীন খাওয়াতে পারবে? সে বলল, না। এমতাবস্থায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এক ‘আরাক অর্থাৎ এক ঝুড়ি খেজুর এল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : এগুলো তোমার তরফ থেকে লোকদেরকে আহার করাও। লোকটি বলল , ! আমার চাইতেও বেশী অবাবগ্রস্থ কে? অথচ মদিনার উভয় লাবার অর্থাৎ হররার মধ্যবর্তী স্থলে আমার পরিবারের চাইতে অধিক অভাবগ্রস্থ কেউ নেই। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাহলে তোমার পরিবারকেই খাওয়াও।
>> সহীহ মুসলিম ২৪৬৩।
ইয়াহইয়া ইবনুূু ইয়াহইয়া (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর সহধর্মিনা আয়িশা এবং উম্মু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তাঁরা উভয়ই বলেন, রমযান মাসে ইহতিলাম ছাড়াই স্ত্রী সহবাসের কারণে জানাবাতের অবস্থায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভোর হতো, এরপর তিনি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন।
যেসব কারণে রোজা (সওম) মাকরূহ বা নষ্ট হয়ে যায়
প্রশ্ন : সওম মাকরূহ হওয়ার অর্থ কি?
উত্তর : মাকরূহ শব্দের অর্থ অপছন্দনীয়। আর সওমের মাকরূহ হল সিয়াম পালন অবস্থায় যেসব কাজ করা অপছন্দনীয়। এ জাতীয় কাজ সিয়াম ভঙ্গ করে না কিন্তু এসব চর্চা করা কখনো কখনো সিয়াম বিনষ্টের কাছাকাছি নিয়ে যায়। এসব কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকা উচিত।
প্রশ্ন : কী কী কারণে সিয়াম মাকরূহ হয়?
উত্তর : সিয়াম অবস্থায় নিু বর্ণিত যে কোন কাজ করলে সিয়াম মাকরূহ হয়ে যায় :
(১) অযুর সময় গড়গড়া করে কুলি করা, জোড় দিয়ে নাকে পানি টানা। এতে গলা বা নাক দিয়ে ভিতরে পানি প্রবেশ করার সম্ভাবনা থেকে যায়।
(২) বিনা প্রয়োজনে খাদ্যের স্বাদ দেখা। তবে প্রয়োজন হলে দেখতে পারে।
(৩) থুথু কফ মুখে জমিয়ে গিলে ফেলা। অল্প অল্প থুথু গিলে ফেললে কোন অসুবিধা নেই।
(৪) যৌন অনুভূতি নিয়ে স্ত্রীকে চুম্বন ও আলিঙ্গন করা, বার বার তার দিকে তাকানো, বার বার সহবাসের কল্পনা করা। কারণ এসব কার্যক্রমে বীর্যপাত ঘটা বা সহবাসে লিপ্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
প্রশ্ন : বিনা প্রয়োজনে যদি কোন মহিলা স্বীয় বাচ্চাকে রোযা অবস্থায় খাদ্য চিবিয়ে দেয় তবে তার হুকুম কী?
উত্তর : রোযা মাকরূহ হবে অর্থাৎ অন্য লোকে যদি খাদ্য চিবিয়ে দেয়ার মতো থাকে বা অন্য কোন উপায়ে যদি শিশুকে খাদ্য চিবিয়ে দেয়া যায়, তাহলে রোযাদার মহিলার জন্য চিবিয়ে দেয়া মাকরূহ হবে।
বি:দ্র:- প্রয়োজনবশত: চিবিয়ে দিলে তা মাকরূহ হবে না বরং চিবিয়ে দেয়ার সময় সতর্ক থাকতে হবে যাতে পেটে খাদ্যের কিছু অংশ চলে না যায়।
সিয়াম অবস্থায় যেসব কাজ মুবাহ অর্থাৎ বৈধ
প্রশ্ন : কী কী কাজ করলে সিয়াম ভঙ্গ হয় না? অথবা সিয়াম অবস্থায় কী কী কাজ বৈধ?
উত্তর : সিয়াম অবস্থায় নিুোক্ত কাজ করলে সিয়ামের কোন ক্ষতি হবে না :
[১] শুধুমাত্র রোগ আরোগ্যের জন্য যে ইনজেকশান দেয়া হয়।
[২] কুলি করা, নাকে পানি দেয়া। তবে গড়গড়া করবে না। নাকের খুব ভিতরে পানি টান দিয়ে নেবে না।
[৩] মিসওয়াক করা, মাজন ও টুথপেস্ট ব্যবহার করতে পারবে। তবে গলার ভিতর যাতে না ঢুকে সে জন্য সতর্ক থাকতে হবে।
[৪] গরম থেকে বাঁচার জন্য মাথায় শীতল পানি দেয়া, গোসল করা, ভিজা কাপড় গায়ে জড়িয়ে রাখা।
[৫] জিহ্বা দিয়ে খাদ্য বা তরী-তরকারীর স্বাদ দেখা।
[৬] সুরমা ব্যবহার, চোখে বা কানে ঔষধ ব্যবহার।
[৭] স্ত্রীকে স্পর্শ করা।
[৮] রাত্রি বেলায় স্ত্রী সহবাস করা।
[৯] কোন কিছুর ঘ্রাণ নেয়া। তবে ধুমপান, আগরবাতি ও চন্দন কাঠের ধোঁয়া বা ধুপ গ্রহণ করবে না।
[১০] সিংগা লাগানো।
উপরোক্ত কয়েকটি বিষয়ে দলীল নিম্নে দেয়া হল :
(ক) সিয়াম অবস্থায় না থাকলে অযুর সময় নাকের ভিতর উত্তমরূপে পানি টেনে নেবে। (তিরমিযী ৩য় ১৪৬)
(খ) আমার উম্মতের কষ্টবোধ হবে এ আশঙ্কা না থাকলে প্রত্যেক অযুর সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম। (বুখারী)
(গ) সিয়াম অবস্থায় তাপ বা পিপাসার কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মাথায় পানি ঢালতেন। (আবূ দাঊদ-২৩৬৫)
(ঘ) গলার ভিতর প্রবেশ না করলে সিয়াম অবস্থায় তরকারী বা খাদ্যের স্বাদ দেখতে কোন অসুবিধা নেই। (বুখারী)
আনাস রাদিআল্লাহু আনহু, হাসান ও ইবরাহীম (রহ.) সিয়াম পালনকারীদের জন্য সুরমা ব্যবহার কোনরূপ অসুবিধা মনে করতেন না। (বুখারী)
(ঙ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিয়াম অবস্থায় (স্ত্রী) চুম্বন করতেন, শরীরে শরীর স্পর্শ করতেন। কেননা, তিনি তার প্রবৃত্তির (যৌন চাহিদা) উপর তোমাদের চেয়ে অধিক নিয়ন্ত্রক ছিলেন। (বুখারী-১৯২৭)
(চ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিয়াম অবস্থায় নিজের শরীরে শিঙ্গা লাগিয়েছেন। (বুখারী-১৯৩৮)
(ছ) বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে সহবাস করে ফজর পর্যন্ত কাটিয়েছেন। অতঃপর গোসল করে ফজরের সলাত আদায় করছেন। (বুখারী ও মুসলিম)
রোজার জরুরি কিছু মাসায়েলঃ
মা-বাবা নামাজ-রোজা ঠিকমতো পালন না করে মারা গেলে সন্তানের দায়িত্বঃ
যদি মা-বাবা নামাজ-রোজা ঠিকমতো আদায় না করে ইন্তেকাল করেন তাহলে (যদি অসিয়ত করে যান তবে) সন্তানের ওপর দায়িত্ব হলো মা-বাবার রেখে যাওয়া সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ থেকে নামাজ-রোজার কাফফারা আদায় করে দেওয়া। যদি তাঁরা সম্পদ রেখে না যান বা অসিয়ত করে না যান তাহলে সন্তানের ওপর দায়িত্ব নেই। তবে স্বেচ্ছায় সন্তান যদি কাফফারা আদায় করে দেয় তাহলে মা-বাবার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। নামাজ ও রোজার কাফফারা হলো প্রতি ওয়াক্ত নামাজ বা প্রতিটি রোজার পরিবর্তে পৌনে দুই সের আটা বা গম বা তার মূল্য কোনো গরিব মানুষকে দান করে দিতে হবে। উল্লেখ্য, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সঙ্গে বেতের নামাজকেও হিসাব করতে হবে। সে হিসাবে দৈনিক নামাজ হচ্ছে ছয় ওয়াক্ত। সুতরাং, প্রতিদিন ছয় ওয়াক্ত নামাজের কাফফারা দিতে হবে। কেউ যদি অসুস্থ অবস্থায় রোজা না রেখে মারা যায় তাহলে রোজার কাফফারা লাগবে না। কারণ সে রোজা রাখতে সক্ষম হওয়ার আগেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। যদি সুস্থ হওয়ার পর সময় পাওয়া সত্ত্বেও রোজা কাজা না করে মারা যায় তখন কাফফারা দিতে হবে। প্রত্যেক ব্যক্তির হুঁশ থাকা অবস্থায় নামাজ পড়তেই হবে। যেভাবে তার পক্ষে সম্ভব হয়। তাই অনেক আলেম বলেন, নামাজ না পড়লে এর কোনো কাফফারা নেই। তবে অনেকের মতে, হয়তো আল্লাহপাক কাফফারার বিনিময়ে তাকে মাফ করে দিতে পারেন। তাই কাফফারা দেওয়া উচিত। [ফতোয়ায়ে শামি, দ্বিতীয় খণ্ড, ৪২২ পৃষ্ঠা।]
পাগল বা বেহুঁশ হলে তার বিধানঃ
যদি কোনো ব্যক্তি পুরো রমজান মাস পাগল থাকে তাহলে তার ওপর থেকে রমজানের রোজা রহিত হয়ে যাবে। যেরূপ ভাবে ইসলামের অন্যান্য বিধান তার ওপর থেকে রহিত হয়ে যায়। আর কেউ রমজানের রোজা অবস্থায় বেহুঁশ হয়ে গেলে এবং তা সে অবস্থায় কয়েক দিন থাকলে যেদিন সে বেহুঁশ হয়েছিল সেদিনের রোজা কাজা করবে না। পরবর্তী দিনগুলোর রোজা কাজা করবে। [হেদায়া, প্রথম খণ্ড, কিতাবুস সওম।]
সেহরি ইফতার ভুলবশত আগে পরে হলে তার বিধানঃ
যদি কোনো ব্যক্তি সেহরি খাওয়ার পর জানতে পারল যে, যেই সময়ে সেহরি খেয়েছে এর আগেই সময় শেষ হয়ে গেছে। অথবা সূর্যাস্ত হয়ে গেছে ভেবে ইফতার করল। অতঃপর দেখা গেল এখনো সূর্যাস্ত হয়নি। তাহলে সেদিনের অবশিষ্ট সময়টুকু বিরতি পালন করবে এবং অন্য সময়ে তা কাজা আদায় করে নেবে। [হেদায়া, প্রথম খণ্ড, কিতাবুস সওম।]
রোজা অবস্থায় স্ত্রীলোকের ঋতুস্রাব বা সন্তান প্রসব হলেঃ
রোজা অবস্থায় যদি কোনো স্ত্রীলোকের ঋতুস্রাব হয় তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। যতগুলো রোজা বাদ যাবে বছরের অন্য সময়ে তা কাজা আদায় করে নেবে। সন্তান প্রসব করলেও একই বিধান। অর্থাৎ রক্তস্রাব বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত রোজা রাখবে না। ছুটে যাওয়া রোজাগুলো অন্য সময়ে কাজা আদায় করবে।
প্রশ্ন : কিডনী পরিষ্কার করলে, চোখে বা কানে ড্রপ দিলে, দাঁত উঠলে, ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ লাগালে, রক্ত পরীক্ষা করার জন্য রক্ত নিলে রোযা কি ভেঙ্গে যাবে বা ক্ষতি হবে?
উত্তর : না, এতে রোযা ভাঙ্গবেও না ক্ষতিও হবে না।
প্রশ্ন : যদি সুবহে সাদেক হয়ে যায় বা ফজরের আযান শুরু হয়ে যায় আর মুখে খাবার বা পানীয় থাকে তাহলে কি করবে?
উত্তর : মুখে যেটুকু খাবার বা পানি আছে তা ফেলে দেবে। ফলে তার রোযা শুদ্ধ হয়ে যাবে। এটা ফকীহদের ঐক্যমতের রায়।
প্রশ্ন : রোযাদার যদি আহত হয় বা নাক দিয়ে রক্ত ঝরে কিংবা কোন কারণে অনিচ্ছাকৃত ভাবে গলায় পানি বা তেল ঢুকে যায় তাহলে রোযার কি হবে?
উত্তর : এতে রোযা নষ্ট হবে না।
প্রশ্ন : চোখের অশ্র“ যদি গলায় প্রবেশ করে তাহলে কি রোযা ভেঙ্গে যাবে?
উত্তর : না, এতে রোযা ভাঙ্গবে না।
প্রশ্ন : রোযাদার ব্যক্তি যদি আতরের গন্ধ, চন্দন কাঠ বা আগরবাতির ঘ্রাণ শুঁকে তাহলে কি হবে?
উত্তর : এতে রোযার কোন ক্ষতি হবে না। তবে ধোঁয়া যাতে গলায় প্রবেশ না করে সে ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে।
i cant read. but i have solaimanlipi installed and i can view other bangla website. even Related posts also showing. but main topics is not showing. why?
ReplyDelete