৪২। ইরবায ইবনুূু সারিয়াহ বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে অত্যন্ত মর্মস্পর্শী ভাষায় আমাদের নাসীহাত করেন, যাতে অন্তরসমূহ ভীত হল এবং চোখগুলো অশ্রু বর্ষণ করলো। তাঁকে বলা হল, হে আল্লাহ্র রসূল! আপনি তো বিদায় গ্রহণকারীর উপদেশ দিলেন। অতএব আমাদের নিকট থেকে একটি প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করুন (একটি সুনির্দিষ্ট আদেশ দিন)। তিনি বলেন: তোমরা আল্লাহ্ভীতি অবলম্বন করো, শ্রবণ করো ও আনুগত্য করো (নেতৃ-আদেশ), যদিও সে কাফ্রী গোলাম হয়। আমার পরে অচিরেই তোমরা মারাত্নক মতভেদ লক্ষ্য করবে। তখন তোমরা আমার সুন্নাত ও হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশিদ্বীনের সুন্নাত অবশ্যই অবলম্বন করবে, তা দাঁত দিয়ে শক্তভাবে কামড়ে ধরবে। অবশ্যই তোমরা বিদআত কাজ পরিহার করবে। কারণ প্রতিটি বিদআতই ভ্রষ্টতা। তাখরীজ কুতুবুত সিত্তাহ: তিরমিযী ২৬৭৬, আবূ দাঊদ ৪৬০৭, আহমাদ ১৬৬৯২, দারিমী ৯৫। তাহক্বীক্ব আলবানী: সহীহ। তাখরীজ আলবানী: ইরওয়াহ ২৪৫৫, মিশকাত ১৬৫, ফিলাল ২৪-২৬, সালাতুত তারাবীহ ৮৮-৮৯।
সহীহ বুখারী৫৩২৫
মুহাম্মদ ইবনুূু বাশশার (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের মধ্যে কতিপয় সাহাবী আরবের এক গোত্রের নিকট আসলেন। গোত্রের লোকেরা তাদের কোন মেহমানাদারী করল না। তারা সেখানে থাকা কালেই হঠাৎ সেই গোত্রের নেতাকে সর্প দংশন করছেন। তখন তারা এসে বলল আপনাদের কাছে কি কোন ঔষধ আছে কিংবা আপনাদের মখ্যে ঝাড়-ফুকারী কোন লোক আছে কি? তারা উত্তর দিলেনঃ হ্যা। তবে তোমরা আমাদের কোন মেহমানদারী করনি। কাজেই আমাদের জন্য কোন বিনিময় নির্ধারণ না করা পর্যন্ত আমরা তা করবো না। ফলে তারা তাদের জন্য এক পালবকরী বিনিময় স্বরুপ দিতে রাযী হল। তখন একজন সাহাবী উম্মুল কুরআন (সূরা-'ফাতিহা) পড়তে লাগলেন এবং মুখে থুথু জমা করে তা সে ব্যাক্তির গায়ে ছিঁটিয়ে দিলেন। ফলে সে আরোগ্য লাভ করল। এরপর তারা বকরীগুলো নিয়ে এসে বললো, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করার পুর্বে এটি স্পর্শ করবো না। এরপর তাঁরা এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুনে হেসে দিলেন এবং বললেন তোমরা কিভাবে জানলে যে এটি রোগ নিরাময়কারী? ঠিক আছে বকরীগুলো নিয়ে যাও এবং তাতে আমার জন্যও এক অংশ রেখে দিও।
মুহাম্মদ ইবনুূু বাশশার (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের মধ্যে কতিপয় সাহাবী আরবের এক গোত্রের নিকট আসলেন। গোত্রের লোকেরা তাদের কোন মেহমানাদারী করল না। তারা সেখানে থাকা কালেই হঠাৎ সেই গোত্রের নেতাকে সর্প দংশন করছেন। তখন তারা এসে বলল আপনাদের কাছে কি কোন ঔষধ আছে কিংবা আপনাদের মখ্যে ঝাড়-ফুকারী কোন লোক আছে কি? তারা উত্তর দিলেনঃ হ্যা। তবে তোমরা আমাদের কোন মেহমানদারী করনি। কাজেই আমাদের জন্য কোন বিনিময় নির্ধারণ না করা পর্যন্ত আমরা তা করবো না। ফলে তারা তাদের জন্য এক পালবকরী বিনিময় স্বরুপ দিতে রাযী হল। তখন একজন সাহাবী উম্মুল কুরআন (সূরা-'ফাতিহা) পড়তে লাগলেন এবং মুখে থুথু জমা করে তা সে ব্যাক্তির গায়ে ছিঁটিয়ে দিলেন। ফলে সে আরোগ্য লাভ করল। এরপর তারা বকরীগুলো নিয়ে এসে বললো, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করার পুর্বে এটি স্পর্শ করবো না। এরপর তাঁরা এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুনে হেসে দিলেন এবং বললেন তোমরা কিভাবে জানলে যে এটি রোগ নিরাময়কারী? ঠিক আছে বকরীগুলো নিয়ে যাও এবং তাতে আমার জন্যও এক অংশ রেখে দিও।
পীর শব্দটি ফার্সি। আরবীতে বলা হয় মুরশীদ। মুরশীদ শব্দের অর্থ হল পথপ্রদর্শক।
যিনি আল্লাহর আদেশ নিষেধ আল্লাহ তাআলা যেভাবে চান সেভাবে পালন করার প্রশিক্ষণ দেন তার নাম মুরশীদ বা পথপ্রদর্শক।
স্পষ্ট কথা হল, পীর হবেন শরীয়তের আদেশ নিষেধ পালন করার প্রশিক্ষণদাতা। আর যিনি সে প্রশিক্ষণ নিতে চায় সে শিক্ষার্থীর নাম হল 'মুরীদ'।
যিনি আল্লাহর আদেশ নিষেধ আল্লাহ তাআলা যেভাবে চান সেভাবে পালন করার প্রশিক্ষণ দেন তার নাম মুরশীদ বা পথপ্রদর্শক।
স্পষ্ট কথা হল, পীর হবেন শরীয়তের আদেশ নিষেধ পালন করার প্রশিক্ষণদাতা। আর যিনি সে প্রশিক্ষণ নিতে চায় সে শিক্ষার্থীর নাম হল 'মুরীদ'।
আরবী ‘বায়া’ত’ শব্দের অর্থ বিক্রি হয়ে যাওয়া। এর ব্যবহারিক অর্থ কোনো কামেল মুরশীদের কাছে ইসলামী প্রথানুযায়ী মুরীদ হওয়া বা শিষ্যত্ব গ্রহণ করা। এই ইসলামী প্রথা মহানবী (দ:)-এর সময় থেকেই চালু হয়েছে। কুরআন মজীদে এরশাদ হয়েছে-
”নিশ্চয় আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়েছেন ঈমানদারদের প্রতি যখন তারা বৃক্ষের নিচে আপনার কাছে বায়া’ত গ্রহণ করছিলো (সূরা ফাতহ, ১৮ আয়াত)। একইভাবে সূরা ফাতহ ১০ নং আয়াতে এরশাদ হয়েছে-
”ঐসব মানুষ যারা আপনার কাছে বায়া’ত গ্রহণ করছে, তারা তো প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর কাছেই বায়া’ত গ্রহণ করছে; তাদের হাতগুলোর ওপর রয়েছে আল্লাহ্ তা’লার কুদরতের হাত (আল্ কুরআন)। বায়া’তের এই ইসলামী প্রথা মহানবী (দ:)-এর বেসাল তথা আল্লাহ্ তা’লার সাথে পরলোকে মিলিত হবার পর হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা:), হযরত ওমর ফরুক (রা:), হযরত ওসমান যিনুরাইন (রা:) ও হযরত আলী (ক:) এবং তারও পরে তরীকতের পীর-মাশায়েখবৃন্দ জারি রাখেন। বায়া’ত কীভাবে গ্রহণ করা হতো তার বর্ণনা দিতে গিয়ে হযরত উবাদা ইবনে সামিত (রা:) বলেন, “রাসূলুল্লাহ (দ:) ঘোষণা করতেন: তোমরা আমার কাছে প্রতিশ্রুতি দাও ও শপথ কর যে তোমরা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, চুরি করবে না, অবৈধ যৌনাচার করবে না, তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না, একে অপরের কুৎসা রটনা (গীবত) থেকে বিরত থাকবে, পাপাচার থেকে বিরত থাকবে; আর যে ব্যক্তি এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে, তার জন্যে পুরস্কার সর্বশিক্তমান ও মহান আল্লাহর তরফ থেকে থাকবে।’ অতঃপর আমরা মহানবী (দ:)-এর কাছে এ মর্মে প্রতিশ্রুতি দিতাম ও শপথ করতাম” (আল্ বুখারী ও মুসলিম)।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা:) এ বিষয়ে বলেন: “আমরা যখন মহানবী (দ:)-এর কাছে (খোদায়ী আজ্ঞা) শোনার ও মানার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতাম, তখন তিনি বলতেন, ‘তোমাদের সাধ্যানুযায়ী’ (আল্ বুখারী ও মুসলিম)।
বায়া’তের ইসলামী প্রথা সম্পর্কে দেওবন্দী মৌলভী আবুল হাসান নদভীও তার ’রিজালুল ফিকর ওয়াদু দাওয়া’ পুস্তকের ২৫৩ পৃষ্ঠায় লিখেছে, “সূফী তরীকার গাউস, হযরত বড় পীর আবদুল কাদের জিলানী (রহ:), হযরত মুহিউদ্দীন ইবনে আরবী (রহ:) এবং নকশবন্দী সিলসিলার পীর-মাশায়েখবৃন্দ বায়া’তের দরজা যতটুকু সম্ভব উম্মুক্ত করে দিয়েছিলেন, যাতে করে প্রত্যেক সত্য ও একনিষ্ঠ বিশ্বাসী ব্যক্তি তাঁর জন্যে আত্মিকভাবে মূল্যবান কোনো বস্তু খুঁজে পান এবং সবাই যেন সর্বশক্তিমান ও মহান আল্লাহ্ তা’লার সাথে তাঁদের (পূর্ব) প্রতিশ্রুতির নবায়ন করতে পারেন। নকশবন্দী সিলসিলার এবং অন্যান্য সূফী তরীকার পীর-মাশায়েখবৃন্দ তাঁদের মুরীদদেরকে এমন এক সত্যবাদিতার মাকামে (পর্যায়ে) উন্নীত করেছিলেন, যেখানে তারা বায়া’তের দায়িত্ব উপলব্ধি ও অনুভব করতে পেরেছিলেন এবং নিজেদের বিশ্বাসকে পুনরুজ্জীবিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।"
0 comments:
Post a Comment